ভুবনডাঙা প্রবীনদের সান্নিধ্য ও নবীনদের আশ্রম।

সৃষ্টি বন্ধ্যা নয়। অনবরত সারাবিশ্বের অগনিত বিষ্ময় প্রতিভা জন্মাচ্ছে। বিজ্ঞান সাহিত্য শিল্পকলা অভিনয় নৃত্য খেলাধুলা চিকিৎসা কারিগরি রাজনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিভাধরদের উজ্জ্বল উপস্থিতির স্বাক্ষর পাই। আবার অজস্র প্রতিভার অকাল মৃত্যুরও আমরা অবাক প্রত্যক্ষদর্শী। শুধু আমাদের ভারতেই নয় সারাবিশ্বে প্রচুর প্রতিভা সনাক্তকরণ সংরক্ষণ ও বিকাশায়নের উপযুক্ত ব্যবস্থার অভাবে চোখের সামনে নষ্ট হয়। মানব সম্পদের এই লোকসান খুব আক্ষেপের। রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গ সুন্দর পরিকাঠামো ছাড়া প্রতিভার রক্ষনাবেক্ষণ অসম্ভব।

হকিস্টিকে চমকে ওঠা বিদ্যুৎ, সুমনের গীটার মাখানো আঙুল, মেসির চোখ ধাঁধানো গোল, জন্টি রোডসের তালুবন্দি হতবাক বল, উসিয়েন বোল্টের পিঠের অদৃশ্য ডানা, বড় রাস্তার পাশে দড়িতে বিপদজ্জনক খেলা দেখানো বাচ্চা মেয়েটার ভেল্কিতে , তবলার চাঁটিতে, তুলিতে, কলমে শিল্প সর্বত্র বিরাজমান যা কিছু শিল্পের গণ্ডিতে ঢুকে পড়ে তাতেই কাব্যময়তা থাকে। এই কাব্যময়তাই পৃথিবীর অসুখ সাড়িয়ে তোলার সর্বশ্রেষ্ঠ এ্যান্টিবায়োটিক হতে পারে।

প্রতিভার প্রয়োজন সান্নিধ্য। যে সান্নিধ্য প্রতিভাকে শনাক্ত
করে সংরক্ষণের উপায় খুঁজে বিকাশায়ন ঘটাতে ভুমিকা নেয়। পৃথিবীর প্রতিটি বিষ্ময় প্রতিভার পেছনে এমন একজন কেউ থাকেন যিনি প্রতিভাধরকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠা করতে গুরুর ভুমিকা পালন করেছেন। গুনী মানুষেরা পরশপাথর। তাঁদের সান্নিধ্য, তাদের অর্জিত জ্ঞান ভান্ডারের মনিমুক্তো নবীন প্রতিভার জন্য চরম আশির্বাদ স্বরূপ। তাই প্রবীন কবিদের সান্নিধ্য পাবার আশ্রয় হিসাবে ভুবনডাঙা নবীনদেরকে কাছে টানার ভূমিকা পালন করবে। আদানপ্রদানের অনুঘটক হিসেবে আপনাকে আমাকে তোমাকে মিলিয়ে দেবে।

সান্নিধ্য ব্যাপারটাতে আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি বেশ ঝাপসা, তবু অস্পষ্ট হলেও আমি ব্যাপারটা নিয়ে বলতে চাই। এক উদ্দেশ্যেহীন লেখালেখি করা হবু কবি হিসাবে আমরা চার পাঁচ জন বন্ধু মিলে ডায়েরিতে বৃষ্টি আঁকতাম। কেউ শুধুই ভিজতো নিজস্ব স্বপ্নে। আমরা কবিতা পাক্ষিকের মেন্টর প্রভাতদাকে ( প্রভাত চৌধুরী) দেখলাম যেন দেবদর্শন হল। পরে কখনও বহরমপুরে প্রভাতদাকে দেখতে যাবার কারণ লিখবো, না লিখে থাকতে পারবো না সেই আশ্চর্য দিনটা। নাসেরদা (নাসের হোসেন), মুরারী দাকে (মুরারী সিংহ) পেলাম। তারপর ওদের সান্নিধ্যে মহাকবি না হতে পারলেও কবিতাকে জীবনের আশ্রয় হিসাবে চিনেছি।
কলকাতায় কবিতা পাক্ষিক পত্রিকার প্রাণভোমরা প্রভাত দার মুখে মুখে শোনা অনেক নামের মধ্যে ছিলেন মলয় দা (মলয় রায়চৌধুরি)। আমরা ওঁকে দেখতে পেলাম না সামনাসামনি কখনো, তবে নেপথ্যে তিনি আমাদের (আমরা তখন কবিতা বারোমাস নামে কবিতা পত্রিকা চালাচ্ছি) নানাভাবে সাহায্য করেছেন। এঁদের সান্নিধ্যে আজ বাংলা ভাষার লক্ষ লক্ষ কবিকে প্রভাবিত করেছে। ভুবনডাঙা  সেই উষ্ণ সান্নিধ্যের অবারিত উঠোন। কারন আমরা দেখেছি এরকম মুক্তমনা কবিদের (বড়) সাহচর্যে লেখালেখির মহৎ উদ্দেশ্য স্থির করতে পারা যায় ওঁদের
ভাবাবেগের ভারসাম্য। নবীনদের জন্য শিক্ষনীয় সেটা আমরা প্রভাতদা, মলয়দা, নাসেরদা, মুরারীদা এদের মতো বড়দের কাছে না চাইতেই পেয়েছি। হয়তো দুর থেকেই আমরা উপভোগও করেছিলাম ওঁদের স্নেহশীল সান্নিধ্য আর ধন্য হয়েছি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন