অরবিন্দ চক্রবর্তীর ১২টি কবিতা 




সমুদ্র সংস্করণ

সমুদ্রে শুয়ে থাকা আজব কিছু নয়―মা শিখিয়েছেন।

কৈবর্ত পরিবারের সন্তান না হলেও 
আমাদের নদীপারে বাস, কুমারপুত্র আমি
অদৃষ্টের অথইয়ে জাল ফেলে 
বাবা অতল থেকে তুলে আনেন 
প্রচুর রহস্য, দৈনিক খুদকুঁড়ো
সবারই রয়েছে জিতে যাওয়ার বিজ্ঞতা
আমরা হেরে যেতে পারি জেনে 
আমার পিতা নিয়ত উজানে বৈঠা চালান

চোখও যে সমুদ্রের সর্বশেষ সংস্করণ
মায়ের মুখে তাকিয়েই পেয়েছি এর সরল অনুবাদ।




বাড়ির কাজ

আর কাউকে জট খোলা শেখাব না।
আয়নার সামনে গেলে যে রূপ-কথাকার চূড়োবাঁধা ভুলে যাবে
তার বয়সলতিকায় কোনো আকন্দপাতার নাম থাকবে না। 
তুমি তাঁবুর নিভৃত থেকে গুছিয়ে গুছিয়ে
কিছু গুজব অথবা মূর্খতা টোকাবে। 
সান্ত্বনা রাখবে ওর অহম আছে, চন্দ্রবিন্দু নেই।

যাদের বাসায় রাত যায়, গভীর রাত পৌঁছায় না
তারা প্রতি বিকেলে হ্যাসড্যাস কাশে
এলোকেশি এলোকেশি খেলে
যদি তথ্য পায় তোমার পছন্দের তালিকায় থ্রি কোয়ার্টার 
বিশ্বাস করো, আজ সন্ধ্যায় সে এলোমেলো
                 শাড়ির শীতে প্রযুক্তিবিদ হয়ে যাবে।
আর ক্লাসে যারা পরিবারের
অ্যাড্রেস গায়ে রিকশায় হুড তুলে আসো, জিপার টানো না―
এসব পিঁপড়ের বাচ্চা হাতিদের হোমওয়ার্ক দিচ্ছি,
                          বাসায় ফিরে কলিংয়ে যথার্থ টিপবে 
                                              দরজা ভেজাবে
                                               জানালা খুলবে 
                                                  পর্দা ছড়াবে
ওয়ার্ডরোব আরশোলা চাষ কতদূর এগোল তা কৃষিনির্ভর দেখবে
চেয়ার বদলের কাহিনি মাথায় রেখে―খবরদার ব্যাকরণ ভাঙবে না।


আমার একজন একজনই আছে

সবুজ ভয় স্ক্রিপ্টে রেখে শহরের পাশ দিয়ে যাচ্ছি
আবেগের ঠিক বাম ঘেঁষে গ্রাম যায়...

একজন পরিযায়ী আলোর চোখে আঙুল তুলে 
সে নদীই দেখাচ্ছিলাম...

ভয়, আজ আপনাকে খুব আদর ইচ্ছে করছে
আদর, আজ তোকে খুব আবেগী দেখাচ্ছে
নদী, আজ ক্যানভাসারের কথাবাক্সে ঢুকে যা 

অথচ ভয়-আদর-নদী কাউকেই তুমি লাগছে না
 
রক্ত নয় জলটিলা সাজিয়ে পত্তনের খুব উঁচুতে দাঁড়িয়ে
অসুখগ্রস্ত আনন্দ, আপনাকেই বলছি,
                     আমার একজন তুমি আছে
                     আমার একজন ঘর আছে 
                     আমার একজন সরোদ আছে   
                     আমার একজন তুমুল হেমন্ত আছে।






সবরকমের ক্যালকুলেটর

যেকোনো জন তিনজন; ভেতরে এক আমি―তুই আমি―সে আমি।

বিদেশ খুললে সিন্দুক, দেরাজ খুললে স্বপ্ন। পরিস্থিতির ভেতর বহু অ্যাকোস্টিক গিটার। অনবরত পাতাবাহার। গুনগুন।

বাদকটি স্নান করে―গাভর্তি ঝরাপাতা।
বাদকটি আরও সুন্দর―কখনো-বা উঁকি দিয়ে বসে বিশ্বভরা নিরজন।

যখন তুমি ধ্যানখেত। তখনো অন্তরে-বাহিরে সুনিবিড় এবং আমি একা।

একার কোনো বন্ধু হয় না জেনে আলো বলে হারিকেন কখনো একা নয়
এবং তখনো একজন একার রক্তচাপ বেড়ে উঠেছে আরও বাড়বে।

এ তো এক ধরনের সমর্থন। পাশাপাশি রকমের বিরোধিতা। বহুবর্ণ দেখবার তুক। ময়নাপাখি অথবা আপাতত স্তন খুলবার মতলব।
সুতরাং শরীর সম্পূর্ণ এবং অর্গ্যানিক।
 
ধরা যাক, বাগান মেখে এসেছে ময়ূর। সারা দিনের ঘোড়া ফুলকি উড়িয়ে এলো কেশর। শৃঙ্গার অথবা টিউবওয়েল থেকে পানি ভাঙাচ্ছে কেউ!

এরও পর তুমি একজন তুমি এবং সকাল খোলার দ্বন্দ্ব-দ্বিধা কিংবা কর্মধারয় অথবা চালাক-চতুর কিংবা বাঘাবাহিনী।
চারদিকে লকার―একার সঙ্গে একা থাকার কত কত আহার-মাংস-পদ্ধতি! 
দ্বিগু নিক্বণে তুমি দিন দিন এত সুন্দর হচ্ছ কেন?






সুষম বণ্টন চেয়েছিলাম

চোখ বেয়ে জল, দুঃখ আঁকাবাঁকা

নেমে যাওয়া আর উঠে আসবার পরবর্তী শেষরাতে ঘুমচৌচির দুঃখবোধ সকলের থাকে না এবং হরণপোশাক সর্বাংশে কার্যকর ভূমিকায় বেসামাল 

তবু যদি বয়ে যায়

ভেতরের আলোটুকু সুষম করব প্রত্যয় থেকে আমার অন্তর একলা হাওয়ার প্রান্তভাগে সিঁড়ি তুলে দেয়―সময় বুঝি হলো, আলোটুকু সবার ভাগে বাটোয়ারা করা যাবে

তবু জল আর পাথর―জলপাথর ভাইবোন পরিচয়ে বুকে মৌচাক সাজায়
আমার ভ্রান্তির শেষ এইখানে―কীভাবে উপকাহিনির ভেতর জীবন ঢুকে পড়ে এবং ধমনীধারা যোগে নেমে পড়ে ওই সীতা, অলকানন্দা, চক্ষু এবং ভদ্রা নামে নামে

তবু সংসার নিগূঢ়―কার সঙ্গে যেন কল্যাণ গায়! অক্ষরে সুরে ভীষণ বাজিকর―পিঠাপিঠি স্বজন।

চাঁদ একা, পৃথিবী একা―মাঝখানে তুমি কি বিহ্বল হারমোনিকা নও?





অবান্তর

নিজের শার্টটা একদিন গাছকে পরিয়ে বললাম
তুই, মানে আপনি কি অরবিন্দ?

গাছ চুপচাপ
কোনো উত্তর পেতে না পেতেই
দেখি কাঁটার প্রাচীরে জোনাক জ্বলে।

একদিন নিজগৃহ থেকে আলোর প্রতি ছুড়লাম প্রশ্ন 
সকল জোনাক কি অরবিন্দের ঘরের বাল্ব?

সেই থেকে তোমাদের বাড়ি চিত্রল উৎসব।

ঘটনার হইরই থেকে এখন বুঝি 
রহস্যের অন্তরালে চলচ্চিত্র থাকে
আরও থাকে চুড়ির টুংটাং, বাসনের ঝনঝন।

যার বিষাদ নিয়ে কেউ কেউ হাসি বাজায়, 
আয়নার ব্যক্তিসজ্জায় অতিলৌকিক ভাবে।




জনখেলা

ধমনি ॥ টগবগ ॥ হুইশকি ॥ রিখটার স্কেল ॥ ঘোড়সওয়ার
রিখটার স্কেল ॥ টগবগ ॥ ঘোড়সওয়ার ॥ হুইশকি ॥ ধমনি 
টগবগ ॥ হুইশকি ॥ ধমনি ॥ রিখটার স্কেল ॥ ঘোড়সওয়ার 
ঘোড়সওয়ার ॥ টগবগ ॥ হুইশকি ॥ ধমনি ॥ রিখটার স্কেল  
হুইশকি ॥ ধমনি ॥ ঘোড়সওয়ার ॥ রিখটার স্কেল ॥ টগবগ

ব্লেন্ড হলো―ময়েশ্চারাইজ―মেরিনেট হলো 

কার কার ভেতরে কম্প?
কারও কারও চোখে দুরন্ত ছুট।
কেউ-ই কি এ পাজল বরদাসত করবে না!

হয়তো আর নয়তো দলে দলে উপদল রূপ নিয়ে সংহার আর আহারের 
দিকে রাস্তা ধরবে রমারোল

আমিতুমিসেতিনিতারাসমেত
পানীয় হোক অথবা হতে পারে কিংবা হলে ক্ষতিই-বা কী এমন―

গ্র্যান্ড মাস্টার, তোমাকেই অনুজ্ঞা, আঙুলগুলো ছিঁড়ে ফেলো।
আহাজারি কোরো না―ধরে নাও ওসব রক্ত তোমার নয় 
। আমাদের ।
যতসব রক্তলীলা―সকলে মিলে যে তলোয়ারের ব্যবহার―
কেন ভাবছ, বিশেষণ ঘাটলে বহু সর্বনাম বেরিয়ে আসবে না!

এবার গর্দান। এবার উল্লাস। এবার বন্যতা।
সবই কি তিনিদের পক্ষধারি বুভুক্ষু উদ্গার।

হল্ট। হল্ট। হল্ট
কোড খুঁজছে শামাপোকা, উপকথায় সাজানো মমিপুতুলের বদরাগ আছে কি না!





গতি

অনেক     থেকে দূর
দূর     থেকে অপেক্ষা
অপেক্ষারও     পুবাস্ত হলো।

দেখা হলো কি?

জন্তু পেরোচ্ছে অশনি; পা পেরোচ্ছে রাস্তা
জেব্রাক্রসিং এখনো আমাকে রেখেছে বসিয়ে―
        ঐ পাওয়া যায় মানুষ।

খুশি হলো কেউ?

বিন্যাস হলো যদি, মানুষ পেল লেজ
                     ―ধরল নদী; ছোবলের সাপত্ব মুছে গেল!

এখানে আমি প্রতি গণের জন, তুমি দরকার নিধি
বাক্স হোক খোলা; চাবি প্রয়োগ না হলে ম্যাজিক।

দূর থেকে অনেক। নিকটে এসে প্রচল কাশবন; 
অন্তরপুরে কারও জিভের হিসহিস কেন? 

বোঝা গেল যা, অপর নাম হাওয়া
দূর থেকে অটুট আর নিপুণ ফিরে পাওয়া ইশারার সহোদর।



নিত্যবৃত্ত চ্যবনপ্রাশ

একগাদা পূর্ব-পশ্চিম নিয়ে হাজির।            ল্যান্ডস্কেপ কাগজ যা সয় না। 
চাচ্ছিলাম ডট বসিয়ে সটকে পড়ি।            সেদিন কী যে চিরহরিৎ-গর্জন।

―বলো তো পুত্র, নিরক্ষ তুমি চাও কিনা?
―দক্ষিণে শার্দুলদল মৃগশিশুর ওলান কেড়ে নিল। কেন?
―আমি তো তোমার অংশ ধরে ডাকলাম।
―লেজঝোলা আত্মা লুপ্ত নামে যুদ্ধ আহ্বান জানালো যে।
―এবার বলো, ডায়নোসর কোনো দিন রক্তবান ডেকেছে?
―যেদিন, সূর্য উঠল না, বিষাদ খেয়ে কৃষিতে গেল মানুষ।
―রঙধনুর কোনো আলামত এসেছে কি রে গুলজার?
―ফিরে এলো মাংস হয়ে, দূরে হাসির কঙ্কাল পাওয়া গেছে স্যার!

পিথাগোরাস এলো হাওয়াঘটিত আদেশে : চাইল দরজা।
খুলে দিলাম সকাল। হুহু করে ৯০০ এঙ্গেলে আমার মুখে তুমি। 
সোনালি বৈঠক হলো : একদল চাইল শান্তি। বিবাদীদলও চাইল একচ্ছত্র শান্তি। 
ফিতা আনা হলো বাদামি। দাগ কাটা হলো সুরেখা।

বিছানায় ফিরে দেখি, আমার জ্বরে কোনো সেলসিয়াস নেই। 
কেবল একটাই দিগ্, একটাই উত্তর―দেখো তো ভাই, 
আমিই সেই ইবনে বতুতা কিনা? ভাস্কোডা বলেন―নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই।





 

米 ডুয়ার্স 米 米 米 চিয়ার্স 米 


সত্যি বলতে কী, সত্য বলে কিছু নেই। যা আছে, সব অশ্বডিম্ব আর মাসেল আর পেরেক আর পেঁপেফুল আর খনিজ আর গার্বেজ।

চলো তো ইয়ার, গ্রাফচিত্র সমান ইহজীবনী লেখা যাক― 

১. সকালে, একখানা থান ইট ছেড়ে এসেছ শিয়রে।
২. দেখে এলে যে, তোমার সূর্য ময়েশ্চারাইজ করছে মেঘবাটা দিয়ে।
৩. বকমবকম করছে আরেকদল ভাষা ফেরত স্বপ্ন্যার্থী।

ভাঁজ খোলা দস্তাবেজের সামনে হাত-পা বিক্রি বাবদ বসেছ ডায়নিংয়ে। 
যেখানে বিল পেইড কানুন, ছুড়ে এলে অসামান্য কয়েন।

বাবার অসুখ, বিদ্যুৎ চমকালো রাষ্ট্রে। শিরোনাম : ॥ রাবিশ॥ ০॥ রাবিশ॥ 
এই খবিশটা আসলে কে, জানতে চাইলে না। 
কারণ : সারা শহরের বিলবোর্ড ভর্তি বিবিধ মাত্রার বুড়ো আঙুল।
ঘটনা যখন সংবাদ হলো, তোমার গোপন নাম ফুর্তি, ডাকনাম আনন্দ হয়ে গেল।
 
(জেনে রাখুন জনাব, কারও অগ্রজের জনপ্রিয় নাম ফুর্তি, কারও ইমিডিয়েট ইডিয়ট ছোট্টর নামও আনন্দ। বিপ্লব তোমারই পাড়াতো বখাটে বড়দা। যার সঙ্গে তোমার গ্র্যান্ডমাস্টার রিলেশন, কয়েক ম্যাচ ছম্কছলো খেলে ক্রস করেছ।)

টাট্টু হে, বেবুন হে, ভুলে গেলে চলবে না যে, মেয়েবন্ধুর সঙ্গে সিডিউল কোনো এক মেরুন দিনে। 
শর্তসাপেক্ষ : উদ্যান-পার্কের নিভৃত বেঞ্চিতে চলবে য়ুঁহূ-চর্যা, সেই বিকালের ত্বক হবে জাফরুল।

যাগ গে ভাই, খুলে দিই পাগল, পথ আমাদের ঘুড্ডি।





শরীরপর্ব

―শরীর, তোমার নাম কী?
―পোশাকে পরিচয়।

পোশাক পরে দেহের প্রশংসা করলে হবে কেন? দেখো না, মঞ্চে এসেছে দুপাটি তাথৈ। সঙ্গে হাই হিল রাত। মাচাঙে চলবে ঢেউ বিষয়ক ক্যাট ওয়াক।

ঝুমুর, এবার তবে খুলে দাও তোমার তুমুল। যত ইঞ্চি শ্লীল পেয়েছ ইহবনে কামড় করো ফুলে আর ফলে। দেখবে, অপরাপর উসকে যাচ্ছে সবার ফ্রয়েড; অংশ সমুদ্র।

শোনো রাত, শোনো দিবা, যারা তোমাকে পরিয়েছে পাতা, বিষুব কৌমের
নকশাঘর থেকে প্রয়োগ হলো মুদ্রাভস্ম; ঝিরিগণ এদিন সভ্যতা নিয়ে রাতকানা খেলবে। জমবে প্রত্যন্ত।

জানো নিশ্চয়, রাতের প্রশংসা মানে মুহূর্ত দিনের চই চই, নটী বিনোদিনীর হাম্মামখানায় ধারা ছেড়ে দাঁড়ানো দেহশোধক।

তখনো, সাদামন মেখে মীরাবাই খুকখুক হাসবে 
সকল দুলুনির আলেখ্যসমেত যেকোনো শরীরকে মানব রাধারমণ-বিজয় সরকার।





শীতের হাড়নামচা

সারামুখে ব্যান্ডেজ করে এসেছে কুয়াশা
এবার যা ঘটবে সবই মারু ডাকাতের কাণ্ড
দস্যুতা করে সপাসপ ঢুকে যাবে
                  গ্যাবার্ডিন শেমিজের নিচে
কুমারী তার বুকের ম্যাপল ছিঁড়ে
              হুলস্থুল ছড়িয়ে দেবে
বঙ্কিম বসন্তের সকল নিভৃত ডালপালায়
ফাগুন কী তবে দাঁতে কাটবে হিংসালতিকা
     মনে বাঘ এসেছে অজুহাতে
           শীতের সাদা গুজব খুলে দেবার মহিমায়
চৈত্রকে সাঁকোর ওপারে দাঁড় করিয়ে
সেও ষড়ঋতুর সঙ্গে করবে বৈঠকি সমঝোতা

তবে বৈশাখের পক্ষে জগতের কিছু স্বর্গীয়দের
                              রয়েছে যে যোগাযোগ
তা হয়তো শীতকাতুরেদের অনেকেই জানো না।





অরবিন্দ চক্রবর্তী 
জন্ম : ১৯৮৬ সালের ১১ আগস্ট; রায়পাড়া সদরদী, ভাঙ্গা, ফরিদপুর, বাংলাদেশ। বর্তমানে ঢাকায় বসবাস। ভারতীয় দূতাবাস, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা ‘ভারত বিচিত্রা’য় সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।

প্রকাশিত কবিতার বই : ছায়া কর্মশালা [২০১৩], সারামুখে ব্যান্ডেজ [২০১৬], নাচুকের মশলা [২০১৮], রাত্রির রং বিবাহ [২০১৯], অতিচল্লিশ ইন্দ্রিয়দোষ [২০২০], ছিটমহলচিহ্নিত [২০২০], ভেতরিন লুকিয়ে হলে সঙ্গে [২০২১], হরিণের গায়ে চারপাশ [২০২১], অ্যাকোস্টিক শরীর সুতরাং গিটারপূর্ণ এবং ফুর্তি অর্গ্যানিক [২০২২], ইচ্ছার আরওতর পিনিক [২০২৩], তথচ কারণবাহী মিজরাব [২০২৪] এবং কবিতাসংগ্রহ [২০২৪]। 

সম্পাদিত গ্রন্থ : দ্বিতীয় দশকের কবিতা [প্রথম সংস্করণ ২০১৬; দ্বিতীয় সংস্করণ ২০২২], অখণ্ড বাংলার দ্বিতীয় দশকের কবিতা [২০১৬], একজন উজ্জ্বল মাছ বিনয় মজুমদার [২০১৯], বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠকবিতা [২০২০]। 

সম্পাদক : বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির পত্রিকা 'মাদুলি' [২০০৯―]

অর্জন : মাহবুবুল হক শাকিল পুরস্কার-২০২০ 
ঐহিক তপতী চ্যাটার্জি সম্মাননা-২০২০
পুনশ্চ সম্মাননা-২০২৩ 
মোবাইল : +৮৮০১৮৫২০৪৬০২৮









সৌ র ভ  ব র্ধ নে র

মোক্ষ পর্বের বারোটি






ঘিলুর রং 

ঘিলুর রং কেমন হতে পারে 
তার একাধিক ফার্ণ আমি সংগ্রহ করেছি
মস্তিষ্কপ্রসূত কেরাটিন দিয়ে গেঁথেছি পর্যাবৃত্ত টগর

এখন প্রত্যাবর্তন জরুরি 
এই মুহূর্ত বানানে -----

একটি মাত্র কার্গো মডিউলের সম্বল নিয়ে 
আমি স্পেসের গতরে এক কাল্পনিক আত্মঅক্ষাংশ 
চিহ্নিত করেছি মদনকদনানলো হেতু ------
সেখানে পাথরের ভুঙভাঙ্ শব্দ ফোটে
ঠোঁটের অজান্তে রসের তত্ত্ব ঢুকে যায় ক্রোড়পত্র ভেদ করে

অতঃপর 
এই হার্বেরিয়াম সভ্যতার বনেটের ওপর দাঁড়িয়ে 
আধশোয়া অবস্থায় বিবিধ ধাতুমুদ্রা 
আমি পুড়িয়ে নিয়েছি নিজের সকেটে
দেহমনের সুদূর পাড়ে হারিয়ে ফেলেছি 
পরিত্যক্ত মর্টারের টব; বৃক্ষের দাবনায় 
অথবা স্বল্প পরিচিত কোনো হিজরের গর্ভে 
ধোঁয়াসিক্ত কুলুঙ্গি দেখে বন্ধুরা বিহ্বল হয়ে পড়েছে

তাদের বিচ্ছিন্ন ছেনির আঘাত সহ্য করছে তারা ও গ্রহাণুরা






খুলে গেছে অভয়ারণ্য

খুলে গেছে অভয়ারণ্য
অড়হর কেঁপে উঠে সেদ্ধ হয়েছে সুঘ্রাণ
অথচ নান্দনিকতার ভয় আমাকে শ্রান্ত ক'রে 
করেছে সেক্স-ম্যানিয়াক। নিরন্তর সারকাজম 
ও সম্মোহন তুলে আমি দেখেছি অসংখ্য চুল 
প্রিলিমিনারি কেশভার বোতাম দিয়ে আঁটা ---

অনূঢ়া মাছের আঁশতলে বসে আছে সে
তাকে আমি সরেজমিন আদর খেতে নিই
গার্ডেড ঠোঁট দিয়ে স্থাপন করি ইষ্ট ------
করে এতটা চিন্তিত হই যে
আমার নাভি থেকে উবে যায় পিউবার্টি ও পিণ্ডদান

অবতল লেন্স দিয়ে তাই নিজের সুঠাম গড়েছি আমি
ট্রাইপোফোবিয়ার ক্ষত সারিয়ে তুলেছি কিছুটা
কিছুটা নির্ভুল করতে পারি বাতপতাকার ব্যবহার

যদিও নাইট কার্ফু এখানে কার্যকরী নয়
এখানে ঘুমের গহ্বরে প্যারালাইসিস, তুলতুলে মেদ
অপ্রচলিত শিরার মধ্য দিয়ে প্রচণ্ড নার্ভাস হয়ে গেছি






বৈরাগ্যে ভরপুর যে বাক্ 

বৈরাগ্যে ভরপুর যে বাক্ 
স্রোতের অতলান্তে লীলা করে, আর যে বাক্
আগুনকে শুদ্ধ করে ভাঙিয়া ------
আমি এই উভয়েরই ক্লান্তি; উহাদের পঙ্গু ও মুণ্ডিত দেবতা

হ্যাংওভার লাঞ্ছিত সমুদ্রসমূহে আমি মাটির ছাঁচ 
শুকিয়ে নিতে চাই, শান্ত এবং অশ্লীল তারাদের।

আমি সৌরদিন ছেড়ে নাক্ষত্রদিনের দিকে ক্রমশ...

নাড়িকন্ঠের গুনগ্রাহী, হে নাবালক 
আমাকে সুপুরি-কল্পিত লয়ের সেবা দাও!
ওগো সেবাইত, অর্জন করো মগ্নতা ও সমস্ত নাগাল
আমাকেও তোমার গৃহসন্নিকটে নিদ্রা বিছিয়ে দাও

চূড়ান্ত তবিয়ত আমার, বিশ্বাস করো
আর উপভোগ করো ময়ূরের অগ্রভাগ। 
অথবা ছায়ামলিন অহিফেন তুলে চলো প্রাতঃপ্রসবকালে
সেখানে যন্ত্রণায় আতর হয়ে আছেন তোমার মা
নিরাকার স্পর্শ দিয়ে তাঁকে আঘাত করো -----

দেউড়ি তাঁর বড়ো প্রিয় আলো, অন্ধকারে ছোটো রাঙাফল






বিভিন্ন ফুলগাছে এখন

বিভিন্ন ফুলগাছে এখন আমি একসাথে ফল আঁকি 
বিভিন্ন করাত কল একসাথে চিরে নিই খাবারে

আমি শস্যবতী সেবিকার জ্ঞানমগ্ন জানুতে 
বেঁধেছি তারামাছের বাজু, ঠোঁটস্থ করেছি চাষাবাদ
নিজেরই মাথা
নত করে দিয়েছি তাহার চরণ-ধূলার স্থলে!
আমি শ্যাওলা-শূন্য অবস্থায় 
ত্রিকাল কুষ্মাণ্ড গ্রোথের গভীরে, আলে আলে 
বিছিয়ে দিয়েছি কীট ও কীটঘ্ন সূঁচ --------

ফিরে এসো, লীলাবতী মুমূর্ষু আমার
এসো এই হীরকমূর্তের যাঁতাকলে
অগভীর সমুদ্রখাতের কারণে তোমার 
বিবাগী হওয়ার ঋণ শেষ; এখন শেষটাও 
মাড়িয়ে ফেলেছো তুমি ------- মারানি খোসার বুদবুদ!

চলো ডুব দিই বিড়বিড় করপুটে
চলো পঞ্চপ্রদীপ করে ধরে অশান্ত করি বিছানাসমগ্র
ভারি হয়ে বসে থাকি যুবতী সাপের কোলে

অন্তত দক্ষিন বাল্ব হতে হিমযুগ পেরিয়ে যাক লঘুপদে





কাচের কৌমার্য

কাচের কৌমার্য ছেড়ে উঠি এখন।
অযৌন জননের প্রতি মোহবিষ্ঠা নিয়ে 
অ্যাশ-শ্যাওড়ার ডালে বসে আছে ফিতে -----
কর্নিকের সোহাগ দিয়ে গাঁথা বদ্বীপ 
প্রবীণ শরৎকে কাছে ডেকে করে গড়াগড়িমসি

চুমিয়া সকল বেঁজিরে, শেয়ালেরে বেসে ভালো
তুমি এসেছো নূতন প্রাতে, এসে গিলেছো 
মদ্যমাক্ত আমার সব দেহ, আমার স্পর্শ 
চেঁটেছো ডৌলমান স্তনজলে দাঁড়িয়ে -------

অতঃপর এই ক্লেদ, এই পাকানো জটের মহড়ায়
আমি অভিসারী লোভের ক্ষত; 
চমৎকার লোভ ও কটাক্ষ হাতে 
ছেয়ে গ্যাছে বিবেকী সংক্রমণের পথঘাট।
ফলত, গ্রামের উপান্তে এসে আজ 
স্বেদে ---- আবর্তে ----- উদ্বোধিত ভয়ে 
আমার খাটের তলদেশ, নাভিকুণ্ড রটে যায় কবরে কবরে :
চাকা জেগে উঠেছে, দড়ি ধরো প্রিয়তম, মূলে এসে
আলজিভ বাঁধো, বাঁধো নিজস্ব কৃশ, নিজ নিজ হাতিয়ার।
গভীরতম জাহাজের ধূম্রতায় মুষড়ে পড়ো আবার
অথচ প্রলেপ ধরে উঠে দাঁড়ালে
তোমাকে দেখতে লাগবে অবিকল স্ফটিক পাটাতন ------






রাত অতিক্রান্ত, শুধু 

রাত অতিক্রান্ত, শুধু মলমের জেগে ওঠা বাকি।

মীনরাশি মাখা প্যামফ্লেটস্ আর স্বচ্ছতোয়া 
গদির নীচে খেলা করছে আমার পুঞ্জাক্ষিবিহীন শিশ্ন,
পরিত্যক্ত জ্ঞানের মদনভস্ম!
ফলে স্বাভাবিক এমন আবক্ষ হ্যাশট্যাগ হয়ে যাওয়া --

একটি অ্যাসট্রে ভর্তি ডিম্বাণু 
ঘরের দোয়েল ভেদ করে চলে যাচ্ছে 
লবনাক্ত কুকুরের কাছে -------
অতি প্রহারে উঠে আমি জানতে পারছি সে কথা।
ক্রমান্বয় ঠাণ্ডার পর্বমধ্যে গড়ছি নিজের স্থির মধ্যবিত্ত;
ইত্য-হলোজোয়িক উত্তেজনা কবুল হওয়ার চিন্তায় 
অকথ্য হয়ে যাচ্ছি ধবধবে শক্তের ভেতর -----
আমার সামনে বর্জ্যপাতের সেই মহাসন 
কালো হয়ে যাচ্ছে হারিয়ে
শস্যের অর্বুদে চুপচাপ বসে আছে তার সারাৎসার ----

তিনি পতিতাপাবন
তিনি অশ্ম খুর ও ধ্বনি একত্রে মিশিয়ে 
বাংলা বর্ণমালার জওজ হয়ে বসে আছেন 
নিজস্ব অন্তর্গর্তে।






মোচার অটুট দিয়ে

মোচার অটুট দিয়ে এতদিন
সবুজাভ মশার কদর খেয়েছি আমি
আমার গোঙানির ওপর সেই মায়া লেগে আছে আজও
আমি পীনোদ্ধত -----
আহা উত্তাপ, অতর্কিত হও
আমি ইরেকটাসের সঙ্গম
আমি তৈল-সিঁন্দুর চর্বিত চর্বণপ্রাশের জীবনেশা!

রক্তাধীন কালো হাড়ের ত্বরিতে চেপে
বৃহৎ এক প্রতিসরণের হেতু 
নামছি তিলফেটে, শিখরসহ উবড়ে যাচ্ছে চোখ ----
যেন এই অকস্মাৎ বৃষ্টি হলাম
যেন এই প্রথম যৌন হলাম আমি
আর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো চরাচর!

আমার জঙ্ঘায় ক্লোরোফিল আর জ্যান্থোফিলের 
আধিক্য ----- এমনকি বেতোঘোড়ার জমঘটও!
তাঁর জটায়ুতে মুখ রেখে আমি প্রেমের গন্ধ সুখী
অর্ধভুক্ত ছায়ার শেকড় খেতে দিই তাঁকে ----

তিনি বন ও বিটপের দেবী
নিজের হস্তচালিত ডানায় ঝাঁপটিয়ে চলেছেন 
বাষ্পের ঋণাত্মক আয়নগুলির ঘূর্ণ্যমান ডাঁই... 







ভরা হদের তলদেশ

ভরা হদের তলদেশ এখন নগ্ন হবে
নিজেদের আঁখিছল ছলছল নয়ন করো প্লিজ!

পিতৃস্পৃহার চেয়ে ছোটো, অতি ছোটো প্লিহা 
এবং অন্ত্রের অন্তরে বাসা বাঁধিয়াছে কৃমি।
তাকে স্বপ্নের আহার দাও, বশংবদ জননী হয়েছ যেমন
ক্ষেত্রজ প্রেমিকার বলে আঁশটে বীর্য ঘেঁটে 
আয়নায় মাখিয়ে দিয়েছি তারামণ্ডল ------
পিণ্ডের সরবে তুলেছি রড়, বিসূচিকা
অথচ মনেটনে কিছু রাখেনি সে
রেখেছে শিলনোড়া হাঁয়ের কোটরে। 

আমিও তার বসবাসী কাচের কন্ঠে চর্মে লোমে 
ঘোলাটে পথ ছেড়ে, হে পিতা
আমাকে তুমি কোন শ্রমে রুষিতেছো!
বলো, নিজের আকুল ও বিগত শব্দাবলি ঘেঁটে
কোন ক্রীড়নক পুতুল সকল প্রখরে আলোকে
হাতের খাড়ু খুলে, সিদ্ধ করে লণ্ড, ভণ্ড করেছে সমর!

তাকে ভরাট জেনের ব্যথা দাও
দাও ছেঁড়া জলের ভেজাল সিক্ত -----
সুনিবিড় শ্লেষের কাছে সে স্থবির হয়ে হয়েছে ঝরনা
হয়েছে এক অগ্র মৌলের দেবাদিদেব। 






ইত্যবসরে আমি হলুদ

ইত্যবসরে আমি হলুদ মসের যন্ত্র নিচ্ছি রোজ। 
সাবধান বুকের ছিদ্রে কড়ি ও কার্ডিয়াক দানা বেঁধেছে
পেটের ভেতর পাখিদের অজস্র রাজাকার 
পাখিদের শেষ হয়ে যাওয়া ভাষা ------
যার শব শেষ হয়ে যায় কবরে, তাঁর সব। 

কৃতার্থ সেনার প্রতি সে নীহারিকা ছুঁড়ে মারা দলদাস
সে সদ্ চিদ্ এক ব্রহ্ম তাঁবেদার
মাংসের উত্তাল থামাতে না পেরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ফাৎনায়

হয়তো তুমি তাকে রোমাঞ্চ বলবে
অথচ, স্ক্রল করে যেতে পারবে না অসহ্য সেঁক
নরম বুকের কথা চিন্তা করে করে 
বীর্যের স্খলন বইবে প্যান্টমগ্ন শীতে -------

অতঃপর হে স্থিরমহ, প্রণতির আলো জ্বালো নম্রকাননে
দ্যাখো, বাহুমূলে কোন স্ত্রীলোক আঁধার মানিয়া 
তোমায় খুঁড়ে খুঁজে চর্যা হয়ে গেছে
কার্যত বর্ষণ শেষ হয়ে গেছে তার 

সারাঘর উলঙ্গ হয়ে সে গাছেদের দরবেশ মুখস্থ করছে







সকালের প্রতি প্রান্তর

সকালের প্রতি প্রান্তর সর্গ করা প্রভু আমি
আমার স্বামিত্বে ভীত হও বিষ -----
এই কদলীখণ্ড ধরো বিবরের গ্রিপে
তুমি গর্ববতী দায় এক, অসংখ্য ঋতুভার তোমার পেছনে
ডেসপারেট সোমরসের ঘড়া নিয়ে ছুটছে...
তাদের মঞ্জরিত উষ্মা দাও, দাও পূর্ণতাপ্রাপ্ত কোষের ঘ্রাণ
যাতে তোমাকে দেখে মনে হয় একটি বিশৃঙ্খল তেজ
মনে হয় তোমার দেহে অজস্র দাগ 
যেন ধাপ্পার সাহচর্যে বেড়ে উঠছে
আর জিওল হয়ে নেমে যাচ্ছে শরীর, একান্তে ----

একদিন এই সিদ্ধির লভ্যাংশ পাবে তুমিও 
অথবা চিরন্তন হাই তুলে গিলে নেবে
বয়স্ক মেলানিনের আসন, তাঁর সমস্ত সখ্যরস

তস্য পত্রমিদং কার্যাঞ্চাগে 
আমাদের স্বীয় ডোলড্রামস্ বানিয়ে ফেলেছে মানুষ।

সেখানেই প্রবাল কাগজে, সেরাদের কাতারে কাতারে 
নেমে আসে বিলাসবহুল ম্যাপলের দুটি ডানা -----
শুধু বক হতে একটি বক আরও একটি বকের 
চারপাশে হেঁটে চলে ------ ধবল স্রাবের মতো নিঃশব্দ সে।






গোপনীয়তা পর্যাপ্ত হলে

গোপনীয়তা পর্যাপ্ত হলে মানুষ আশ্চর্য হয়ে যায়
তাকে সামান্য পরত ও বিভ্রমে আর ডাকে না কেউ 

কোপবিহ্বল পিপাসায় ও পিঙ্গলে উঠে 
তার সকল ঘুঁটি, যোজন ক্ষমতাহীন সকল পর্বত
পরিণত হয় নির্বিকার চলচ্ছক্তিহীন রোদে। 

অতএব, আশ্বস্ত হও মেষ -----
যে মেষ তার পিতার মৃত্যুর পরও 
গুটিয়ে রাখে না হাত ও চূড়ান্ত সংগ্রহ
তাকে ঘাসের সকল ডগা খুঁটে খুঁটে দ্যাখাও
কেমন ঘন শুভ্র উপযাচক জমেছে আতপ্ত খড়িমাঠে
জমেছে ফুসফুস দূর খোয়াইয়ের হাড়ে ----
গভীর মহাকাশের কর্কট নিয়ে সে
একের পর এক বাদক ভেঙে যাচ্ছে পাহাড়ে, শৃঙ্গারে।
 
অথচ আমি পুনরায় নিজেকে বর্গ করছি
বৃদ্ধ করছি, বিদ্ধ করেও আলো আসে
আলো নয় ঠিক, আলোর ডামাডোলে ঘেরা ঘুনি
অথবা এমন কোনো কান্তারস 
বিমূর্ত হিসাবে যার কদর করতে পারি, কিংবা 
সামান্য ঢেউ ভেঙে পৌঁছে দিতে পারি অপরিহার্য হ্যারিকেন






প্রবাদপ্রতিম শ্লথে 

একটি প্রবাদপ্রতিম শ্লথে আর অসংখ্য ইতিমধ্যে 
আমি সুযোগ পেতে বসে আছি;
যেনতেন শাস্তিই অনিবার্য আমার।

শুধু গ্রীষ্ম পাবার লোভে, মুচমুচে 
ঘোরের ভেতর আমি পবিত্র উদ্ভিদ, গিলিতেছি মৃদু মোম।
পাহাড়ি পাখিদের গর্ভে 
খুঁজে বেড়াচ্ছি তাদেরই সমতুল্য কোনো ভাষা 
কিংবা বায়ু আর মানুষের একেকটি সূক্ষ্ম চুম্বনে 
অসংখ্য ঝরঝর ভেঙে পড়ছে একা, একলাটি

আকাশের ছায়া সরে সরে যাচ্ছে
মেঘে মেঘে খেয়ে যাচ্ছে চোখ, দগদগে -------
আনুসঙ্গীকতাহীন একটি দেহের এই বয়ে যাওয়া 
আমাকে কৃতজ্ঞ করে। আমার স্বাঃ থেকে হাঃ হয়ে 
উহারা ক্ষুদ্র পুকুরের প্রপাত যেন কত
কত ভালোবাসে কাঁখে ওঠা শ্লোক 
আর ভিজে যায় সেইমতো কর্দমাক্ত বছর
ভেঙেচুরে জাস্ট আহ্লাদ হয়ে যায় সে ----

ক্ষয়ে যায় তার সমস্ত নিতম্বগুটি, আত্মার পিনড্রপ ব্যথা




সৌরভ বর্ধন
শান্তিপুর, নদিয়া








শৌভিক দত্তের ১২টি কবিতা




উপসংহার      

ঝলসানো মাংসের গায়ে মাখানো সাহস
আমায় সন্দেহ করে
আয়না জল হয়ে যায়

ফোঁড়নের প্রস্তুতিপর্ব পেরিয়ে এসেছে ভয়
ঘুম ঘুম স্যাঁতলানো রাত
জবাবদিহির স্যালাডে
রাখা আত্মার জবাইচিহ্ন
উনুনের ঘরবাড়ি কাগজচাবুক

বিষণ্ণ ফোসকার মায়ায়
ঘেন্না ফেরাতে ফেরাতে
শিরাগুলি টগবগ করে
যেন প্রশ্ন ছেড়ে গেছে আমাদের
যেন দাঁতসেলাই শেষে 
মুখের কোনও ভূমিকা থাকছে না




অরণ্যপ্রবাদ

মাটি চাটতে চাটতে খুব খিদে পায়
আদিম ঘোষণার মতো দুড়দাড়
দৌড়ে যায় চাঁদ
আমি সন্দেহের গাঢ় তালিকায় থাকি
নামজারীর বাইরে রাখা সুলুক
সন্ধানের ভিতরকণিকা
ফুলফল শীতকণা জমে
ঘোরবন্দী ছায়ায় আমি
চোরাবালি গুছিয়ে রেখেছি
রেখেছি নখরপালিকার জলার্ধে লেখা নাম
আর ভাতের ঘোষণা
ভেড়াদের জাতীয় সঙ্গীত
তর্করেখার বাইরে গৃহপালিত খাদ
চুপ শব্দচুরির উপমা
শরীর খাদানে অরণ্যপ্রবাদের ভুলগুলি





কাচমানুষ

   তালাভাঙার উচ্চারণে
আমার পাখি ফুরিয়ে যায়
পংক্তিভোজনে আমি 
অর্ধেক লাবণ্য রাখি পাতে
বাকী অর্ধেক অতুলে ফিরেছে
ছায়াছায়া বৃষ্টি ডেকে যায়

আমপর্যায়ে আমি 
সরকারী তথ্য হয়ে থাকি
ছমছম দৌড়ে যায় কাঠের ঘোড়ারা
বিষণ্ণ কাকের মতো
ঘুড়ির ছররা ওড়ে মহল্লায়
পায়ের আহ্নিকে গুটিয়ে রাখা গোলাগুলি
চেরাচেরা ঝড়জল আসে

তদন্তের বাইরে আমি এক 
নীলামবাজার
ঘড়িছুরিতে ভেজা
তাজা নেভা সমুদ্রের ছাপ






ঝাঁপ

 ঝাঁপ দিতে দিতে খেলা ফেটে যাচ্ছে

রাস্তার দর্শকে যারা গিয়েছিল
তারা কেউ ফিরবে না
পোশাকের বারান্দা খালি পড়ে আছে
পড়ে আছে তুলির শেষটান

আত্মহত্যার এই প্রকল্পে
দেশ নেই, খিদের প্রজনন নেই
শুনশান দৌড় পড়ে আছে
অন্যমনস্ক একটা ঢিল
তাক করছে তার ছায়াকে
মাটির পুতুলে
টুকরো হচ্ছে মাটির পুতুল






বৃষ্টিজরিপ

যেখানে বিষাদ ডুবেছে
সেখানে চিহ্ন রাখতে নেই
সর্বোচ্চ তাপমাত্রায়
নিম্নরেখার কাছে জতুস্নান
সাহসপছন্দ আলোয়
চকচকে গোধূলি এসেছে
এসেছে ফুলের মাসোহারায়
অবাক ও সন্দেহ
তরতাজা গল্পের আগুন

কিশোরী খনিতে
টগবগ হয়ে আছে বৃষ্টিজরিপ
যতোদূর বন্ধ অসুখ আর তলোয়ারের চাহিদা
মেহগণি চিঠির মন্থরে
রাস্তা হেঁটে গেছে
শিকারপুরাণ বসা বাঁকের প্রত্যেকে






দেবীপক্ষ

 দেবীপক্ষ উপচে
কতো কতো সাতভরী জল
ভুলভাল কাগজ বসানো মফঃস্বলে
দেয়ালা হলো না
ছানাপোনা সহ ছিমছাম 
মোহর বসেছে
ভুতুড়ে শ্যাওলার মতো
নোনাভিতে মূর্খ জমছে 
ঝুঁকির ডালপালায়
রাতবসন ভাগাভাগি হয়
হয় আঁশগন্ধ নিয়ে কথাবার্তা
মরিয়া চোরাচালানে
ছাল ছাড়ানো ভাতের
অনুচ্চারণ ছড়াতে ছড়াতে
চলে যাই
শরীরে দাগ শরীরে অঙ্ক
কাঠের প্রমাণে রাখা বস্তুনাম
ছবিশাড়ীতে ঈষৎ 
মাতাল ফলানো আলো
চাউনি পিছলে যাচ্ছে
মাংসপেশীর দিকে ঘুরে যাওয়া সমস্ত বোতামে...






ঋতুশ্রমিক

    লিখি
 নীল বসা ভাতের গভীরে
  আমার মমি
পান্তাভেজা পোকারা বসেছে
ছাইরেখায়
শ্মশান শুঁকতে শুঁকতে আমি
দরজার গন্ধ ভুলে গেছি
রোদ্দুরের আওয়াজে
আমার জ্বর হয়

ততোদিনে
  ঋতুশ্রমিকের খাদানে 
গেঁথে রাখা বর্শায় বর্ষা নেমেছে
নেমেছে 
প্রজাপতি ফুরিয়ে যাওয়ার ডালিম ডালিম খেলা
যখন উপাসনায় 
অস্ত্র ঢালছে কেউ
ঢালছে ফেলে আসা ঢেউয়ের প্রতিনাম






শারদীয়া

এই যে কাবাবকে বিদূষী বলছো
প্রতিটি লালঘুমের আস্তানায়
দাঁড় করিয়েছো অক্ষর
পাটভাঙা গলিতে বহুদিন
তোমার মহার্ঘ থুতু জমে আছে
সাবানকে সাবান বললে
ময়লা সাহায্যকারীর কোনও সম্মান থাকে না
তোমার নোনতা দাঁতের ধার
ইদানীং ঘড়ির কাছাকাছি নেই
মাতৃপূজার সময় হয়ে এলো
অথচ তোমার আহ্নিক এখনও
ঠাণ্ডা ও স্যাঁতসেতে
ভেবে দেখো
পূর্বজন্ম মনে পড়ে কিনা
যেখানে তুমি একাই
ইঁদুর ও সাপ হয়েছিলে






স্নান

সন্ধ্যা মেরামত করছে আঙুল
মগজ মেরামত করছে দূরত্ব
ঝাঁকুনি থম মেরে আছে
কাচের দিকে ভাত রাখছি
কাচের দিকে ভার রাখছি
যজ্ঞ উড়ে যাচ্ছে বন্দুকে
বাঁধ উড়ে যাচ্ছে স্বাধীনতার
কিছু সমুদ্র নৌকায় ফেরেনি
চোখে ফেরেনি কিছু ফেরা
তুকতাক নিয়ে বসে আছি
তৈরী করছি হাঁসের উপনিবেশ






অখণ্ডকাল

খণ্ড ফুরোলো না
আমি তুতো মাংসের হাড় রাখলাম
স্বভাবচিহ্নে পাখি উড়ে গেল

গেরুয়াযাত্রা আমার পছন্দ না
শেকল বাকলে এই ভাতঘুমের বস্তি
ডানাকাটা মাঠের বাণিজ্য 
আমি হারিয়ে নেমেছি
শরশয্যায় চোরাশিকারীর মতো
জ্বলানেভা আমার চোখ
পেশাদার সন্ন্যাসী খুলছে
মাংসের অর্ধে রাখা পশুপালন
বাকী অর্ধ শূণ্য গেরস্থালী
শেকড়ের প্রতিযোগীতায়
অখণ্ড ভারত আঁকছি
রাখছি 
চওড়া রাস্তায় দৌড়ে যাওয়া শিশুমৃত্যুর হার







ঘোষণাপত্র

কিভাবে জরুরী হবো ধানগাছের মতো
ঘোষণা থেকে দূরে
মায়া জমে আছে পায়ের
রাষ্ট্রীয় ছায়ায়
আগুনের ডালে শীতের ভাষা এসেছে
সঞ্চালিকা ঘেমে উঠছেন
যেভাবে 
বরফপ্রধান খবরে আলোচনার 
গতিবিধি কম
সতর্ক টুকে নিচ্ছেন ঈশ্বরের আপ্তসহায়ক
চাঁদের বিজ্ঞাপনে 
ভাতের কথা লেখা নেই
ছিপ বসেছে মুক্তবাজারে
রূপকথায় চাপা পড়ছে
ধারাযুক্ত ঐ মগজবিজ্ঞান
একটা দেশলাই
দেশ পাচ্ছে না কিছুতেই.....







উৎসব

অবশেষে পদাবলী রোগ আমার সেরে গেল। এই মৃদু পথ পথ ভাব। রচিত নৌকায় বসে আছি। মূষিকেরা উড়ছে। এসময় মাংসের গল্পে গাছ লাগানোর উৎসব। এসময় গাছের গল্পে মাংস নামানোর উৎসব। গরুর লেজ ধরে বৈতরণী পার হচ্ছে লোক। লজ্জা আস্তে আসতে বিচারাধীন হচ্ছে জনপদ। তন্ত্রে গণবাজার বসেছে। চাবুক নামছে চোখে। রচিত রান্নায় বসে আছি। জল মাপছি উনুনের। মাপছি পোশাকের সংবিধানে নামা ঘুম।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন