আমি এক ড্রপআউট ঘোড়া
ভূমিকা
'প্রথম দিনের সূর্য প্রশ্ন করেছিল সত্তার নূতন আবির্ভাবে- কে তুমি, মেলে নি উত্তর।
বৎসর বৎসর চলে গেল, দিবসের শেষ সূর্য শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল পশ্চিমসাগরতীরে, নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়- কে তুমি, পেল না উত্তর।'
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'শেষ লেখা' কাব্যগ্রন্থের ১৩ সংখ্যক কবিতায়, 'কে তুমি', এই প্রশ্নটির একটা চিরন্তন আবেদন আছে। যেন বিপুল আলো-অন্ধকার থেকে উৎসারিত আমূল সত্তা-কাঁপানো এই প্রশ্ন। আদৌ কি এর কোনো উত্তর হয়? এটি ভাবতে গিয়ে দেখলাম, প্রশ্নটির মর্মমূলে যে অন্তর্ঘাতশক্তি, তা সম্মোহিত, বিপন্ন, বিব্রত যেমন করে, শূন্যতাও জাগায়। তবু, সত্যকথনের নিকটবর্তী যদি হতে না পারি, তবে একটি ইঙ্গিত, রূপকের বাস্তবতা, বা অন্তত একটি হেঁয়ালি, একে হয়ত মর্যাদা দিতে পারে। যে-কোনো কারুকর্মীকে একদিন প্রশ্নরূপী এই চাবুকের মুখোমুখি হতে হয়, কেননা 'কে আমি'র পিছে খণ্ড খণ্ড আমি'র ছায়া সতত শিকারির মতো ঘুরছে।
এই গ্রন্থের লেখাগুলো, তাৎক্ষণিক! বা সামান্যকে খুঁজে ফেরা। অবশ্য আমার সব লেখাই কমবেশি এমন। জগতে তুচ্ছ, অতি-তুচ্ছ, স্খলিত যাকিছু, সেসবের দিকে benevolent curiocity নিয়ে যদি তাকাই, একেকটি মুহূর্ত সেখানে ভাবনাবীজ যেন, প্যারাডক্স হয়ে উঠতে সক্ষম, কখনো যেন তারা মাধবী! বাকফসলের রাজ্যে, কী-বা নাম হতে পারে এদের, ব্ল্যাকহিউমর? হেত্বাভাস? ন্যানো? চিত্রোক্তি, না, অন্যকিছু? যা-ই হোক, তেমন দাবি না রেখে, একজন হরবোলার মতো শুধু দেখে যাওয়া, আর সংক্ষিপ্ততম করে টুকে রাখা। ইমেজারি সন্ধান! কবিতার সেট-থিওরি, করণকৌশল, আর সমস্ত আখ্যানবর্ণনার বাইরে এসে, সন্ধ্যার আকাশে ভেসে বেড়ানো একখানি ছোট সিন্ধুমেঘ যতটুকু বলে, তারই আয়োজন।
মজনু শাহের কবিতা
১০
আবহমান গাধার পিঠ থেকে পড়ে যাই আমি আর বন্ধুর বৌ।
১৭
কেন লিখি? ... সমাধিপাথর খুঁজে বেড়ানোর অবসরে মূলত এও এক যৌনভাবুকতা।
২১
শাম্স, এই খ্যাতি-লিপ্সা, এই মেরুপথের অন্ত না পাই। এ কি নয় গাধার সঙ্গে সঙ্গম!
২৬
সেদিন সাপলুডু খেলা সমাপ্তির কিছু পরে তোমার অর্গাজম হল।
২৮
রামপ্রসাদ গাইছে কেউ। তোমাদের দুই বোনের কণ্ঠস্বর প্রায় একইরকম। এখন গান ও গরম ছাই উড়ে আসছে তোমাদের বাড়ি থেকে।
৩২
স্বপ্নের দায়িত্ব মাঝে মাঝে দুএকটা যৌন-খরগোেশ সহজে ধরে আনা।
৩৪
কিছু কিছু খিস্তিখেউড় আমি গোলাপকুঁড়ির কানে ঢালি।
৪২
রক্তরঞ্জিত মাঠে এখন বৌ চলে যাওয়া অঙ্ক-মাস্টার আর খেঁকশিয়ালেরা বসে আছে চুপচাপ।
৪৮
কোনো কোনো ফুলের মধ্যে মহীয়সী ডাকঘর আছে।
৫১
ঐ ময়ূর-টিলা, আর তার শীর্ষে ঐ গাবগাছের ছায়া পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে আমাদের আইস্ক্রিম গলে গেল।
৫৭
তোমার ছোটবোন ঘুমযন্ত্র সারাইয়ের কাজ জানে?
৬২
আকাশ অবধি উঁচু ঐ কাঠের মই যখন পুড়ছে, তার চেয়ে কে আর আছে সুন্দর?
৬৭
যতই লাইব্রেরির গভীরে যাই, দেখি সাপের বাক্সের উপর বসে হাসছে শার্ল বোদলেয়ার।
৬৯
তোমার গৃহশিক্ষক তোমার কাঁটাগাছ খেয়ে ফেলতে চায়, জানো?
৭২
একটি শিশু-শামুক সন্ন্যাসীর গা বেয়ে উঠছে।
৭৪
সান্তাহারগামী ডাউনট্রেনের মহিলা-কামরা থেকে আজ এত ভুট্টা পোড়া গন্ধ আসছে কেন?
৭৬
ফার্নের আড়ালে পড়াশুনা করতে করতে সাপটা হলদে বর্ণ হয়ে গেল।
৮০
মধ্যরাতে, একটা আদ্যিকালের বন্দুকের মতো আচরণ করো তুমি মাঝে মাঝে।
৮৭
উনুনের অন্তর্জগত আর আকাশের অন্তর্জগত জড়াজড়ি করে হাসছে।
৯৪
সামনে যেতে যেতে কাঠবিড়ালিটি অভয় দেয়, এই সুড়ঙ্গ পেরোলেই রমণবিদ্যা।
৯৭
৭৭২ নং কফিনে ভাষাহারামির মৃতদেহ মৌরিফুলে ঢাকা।
৯৯
মাথায় শাপলা-জড়ানো একটা জলঢোঁড়া এখন এগিয়ে আসছে তোমার দিকে।
১০০
ক্ষিপ্ত ঘোড়ায় বসে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টা করছে এক বনমানুষ। তার থলি থেকে ছিটকে পড়ছে রক্তজবা ও মার্বেল।
১১০
শারদীয় মেঘ, রুটিনির্মাতা, স্বপ্নদস্যু, শশী, শশী-কুসুম, আগ্নেয় পতঙ্গ, জঙ্গলসুন্দরী, বেতো ঘোড়া... সবাই নিজ নিজ শিষ্য খুঁজছে।
১১৪
দেখি স্বপ্নের মধ্যে তুমি গয়নার বাক্স খুলে শান্ত বসে আছ।
১২২
একটি স্ফুলিঙ্গে কেঁদে ওঠে আল্লাহ্ ব্যাখ্যা।
১৪৬
চাঁদ-মোড়ানো কবরখানায় ছুটি কাটাতে এলাম!।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন