(অলংকরণ: বিপ্লব দত্ত)





ক্ষমতা

বেড়িয়ে আসতে চাওয়া ঢেকুর চেপে আবার তলানীতে পাঠাই, ওখানেই বিক্রিয়া করুক, ক্রিয়া-বিক্রিয়ার কথা মনে করতেই ভাবলাম পানের দোকানে গিয়ে মিষ্টিপান নিয়ে আসি, চিবতে ভালই লাগে, কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি, একটা দোকান অর্ধেক খোলা তার উপর হুড়মুড়িয়ে র্ক্লান্ত মেস বাড়ির পাচকীনিরা ভিড় জমিয়েছে, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিদায় নিলাম, লাইনে নিলে আমি সবার পেছনে পড়ি, টিকেটের দামটাও বেশি পড়বে, অগত্যা চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বলি, বাহবা।
 সন্ধ্যেয় তীক্ষ্ণ হাওয়া জাম্পাট ভেদ করে লোপকূপে জাঁরকাঁটা বিঁধিয়ে দিয়েছিল, দেবী নিয়ে খুব একটা ঝামেলা হয়েছিল, আমি সায় দিতে পারিনা, মৃত্যু দেবীরা ঝাঁকে ঝাঁকে মরনোত্তর পদক দিতে ব্যস্ত, পদক এবং পদের মিল আছে, প বর্গীয় ওষ্ঠ ধ্বনি কি নাজেহাল করে ছাড়ছে,
মৃন্ময় বলল, 
ধ্রুব হোক। 
দেবী জঙ্ঘায় বোসো।
দেবী নিরুত্তর।
আবার বলল-- দেবী উরু উন্মোচন করো।
দেবী নিরুত্তর।
তারপর ইস্তফা দিয়ে মোবাইলের হেড লাইট এবং ভিডিও চ্যাটিং বন্ধ করে মৃন্ময় নিদ্রামগ্ন। আর সব ছাপোষারা হেই হেই করতে করতে গোল বাঁধিয়ে দিলো, এ পাপ, মহাপাপ।। কেউ কেউ অশ্রাব্য অভিশাপ দিয়েই ক্ষান্ত হলনা, বালিশের তলে হাত চালিয়ে দেবীর সন্ধান করতে লাগল, একি কোথায় দেবী? বোকা বনে গেল।
চিক্কুর ডোক্কারে দুবার ধমক দিয়ে আসি, রাহুল এসে বলে, দাদা, মৃন্ময় ইজ আ প্লে বয়, ন্যাস্টিক।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বলি, তোমরাই জানো।
-টান আছে ভাল।
-কিসের টান?
-জানি, বুঝি।
-তা যা বোঝ।
রাত্রির চাকা ঘুরতে ঘুরতে শিল্পের চোখ পাই, দেয়ালে দেয়ালে অকথ্য কথ্য বিদ্রুপাত্মক কথামালা, তিনটে বাজলে খিদে, পেট গড়গড়, সিগারেট টেনে সময় কাটাই, এতো রাত্রিরে মৃন্ময় উঠে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়ে, দাদা এ শালাদের কাজ নাই খালি আমাকে নিয়ে পড়ে থাকে।
-সম্ভবত নেই, সত্যি কি..
প্রশ্নটা শেষ না করতেই, না কিছুনা বলে চলে গেল।
সকালে মুখের উপর রোদ পড়েনা, জানলা আঁটা প্রাচীন যুগ থেকে, পাশে জলপড়ার শব্দ, আবর্জনার গন্ধ, হাজারিবাগের চামড়া শিল্পের গন্ধ মনে পড়ে, অলিতে গলিতে শুকনো মৌসুমে কাদা, উফ। 
সকালে রাস্তার উপর অটোগুলো নির্ধিদ্বায় চলছে, রাস্তা চওড়া, পেরোতে খানিক অপেক্ষায় থাকি, দেবী, কী ঘটনা?
হুম চায়ের পেয়ালা ধীর চুমুকে শেষ করেছি, মেইন গেইটের বাইরে রোদে দাঁড়াই, ভেতর থেকে চিত্‍কার চেঁচামেচি, বিরক্ত। কে একজন হাক দিল, রক্ত!
ছুটে গিয়ে দেখি রক্ত, গোল করে একটা ভিড় দাঁড়িয়ে, ভিড় ঠেলে উঁকি দিই, মৃন্ময় মেঝেতে বসে ডুকরে উঠছে, ব্যাপার কী?
বুঝতে দেরী হল, এক জনের নাক-মুখ ফেটেছে, এই। সে কই?
হইচই সাফ হলে হত্তাকত্তারা মিটিং ডেকে নিল, আমি পেছনে মূঢ়ের মতো দাঁড়িয়ে।
মিটিঙের আহ্বায়ক রূঢ় গলায় বললেন, এটা কি স্টুডেন্টের মেস? ফাইজলামি?
পান্ডাগণ সায় দিলেন, তাইতো, তা ঠিক।
-বল মৃন্ময় মারছিস কেন?
মৃন্ময় ভয়ে ভয়ে জবাব দিল, ও মারছে তাই।
-কেন?
-জানিনা।
-জানোনা মানে কী? দাদাগিরি?
তারপর একজন গিয়ে কষে থাপ্পড় মেরে বললেন, তোমার জরিমানা।
কিন্তু আমি খুজছিলাম রক্তাক্ত ছেলেটিকে, তার কাছে কিছু শোনা হলো না, সে কী আইসিইউতে?

অবশেষে তর্কাতর্কি জরিমানা, দলগত পাঁয়তারা ইত্যাদির পর-- সিদ্ধান্ত, 
সিট ক্যানসেল, কালঅব্দি থাকতে পারবে, 
টাকা খাওয়ার জন্য ছোট্ট ঘটনাটাকে বাড়িয়ে অহেতুক ছেলেটির কাছে পেশ করতে থাকে, এই নীতি সমাজ মানে, কিছু বলতে গেলে রোষানলে পড়তে হয়, তবুও হত্তাকত্তাদের গিয়ে বললাম, ভাই ছেড়ে দেন।
হুঙ্কার দিয়ে বললেন, কিসের ছাড়? হয় জরিমানা নয়তো ক্যান্সেল।
-ছোট ঘটনা মিটিয়ে দিলেই হল।
-ছোট ঘটনা। 
ওদের দেখে আরো কতজনের স্পর্ধা বাড়বে, তুমি জানো!
রেগে বললাম-- তাহলে দুটোকেই ক্যান্সেন করিয়ে দিন।
কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, না।
-তাহলে কেউ যাবে না।
-দেখ, তুমি ইন্টারফেয়ার করো না। আমরা দেখবো।

-মানবোনা।
-দেখি।
-পেশির জোরে যাকে তাকে ইয়ে করা বাদ দেন।মৃন্ময় থাকবে।
হারবাল প্রোডাকশন গালি ঝেরে দিল, বাইনচোদ, তোর কী হইছেরে। তোর কী?...
আমি নীচে নেমে আসি, দুপুরে খাবার টেবিলে হত্তাকত্তা বললেন, ঠিক আছে থাকবে। দ্বিতীয়বার যেন না হয়।
সবটাই একটা শক্তি, ক্ষমতা, অরাজনৈতিক, তবু রাজনৈতিক দোলাচলে সঙ্গ দিতে কেউ পিছিয়ে নেই, ঘরে বাইর সর্বত্রই ক্ষমতা, সহপাঠীদের কেউ কেউ, ভাই রাজনীতি কর, ছাত্রজীবনে রাজনীতি না করলে...
হত্তাকত্তার রুম বন্ধ, উনি দেবী অর্চনায় ব্যস্ত, উনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দেবীর পুজো করেন, শীতলা থেকে লক্ষী পর্যন্ত। 

কিন্তৃ আর যতজন আছে তাদের ক্ষেত্রে ফাইনের লিস্ট ঝোলানো, দু থেকে পাঁচ হাজার, সেদিন এক দেবীর সাথে ধাক্কা খেয়ে দরজায় সেঁটে গেলাম।

অগণিত দেবী, আসছেন-যাচ্ছেন।
পান্ডাগণ একটা ব্যবসা চালু করেছেন, দু-তিন হাজার ব্যস।
ঝামেলা এড়িয়ে ছুটি কাটিয়ে এলে মন্দ নয়, প্রেমিকার সামনে তার মাকে খেলানোর কথা নিশ্চয় মন্দ নয়? কাম হয়ে গেলে চ্ছদ এবং ছেদ দিয়ে দ্বিতীয় পরম্পরা টিকিয়ে রাখা চাই। দল বলছে, ইনজয়।

...বটেই~




ভীষ্মদেব সূত্রধর 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন