হরিণী ও আমি
১.
জ্যোৎস্নাবনে একা একা ! তাও ঝরনা অবধি বিবস্ত্র !
হে তৃণভোজী অমলা , যত্রতত্র বাঘের হালুম
এভাবে বেড়াও কেন ? জানো তো এ তন্বী বনস্থলী
রাতে শ্বাপদ শাসনে । ঘরে চলো প্রাণের শ্রীমতী
কে বলেছে ফ্ল্যাট বাড়ি ছায়া ছায়া কম্পিত আঁধার
ওই দেহের মখমলে স্পষ্ট দেখি পরমার্থ রোদ ।
হরিণী ভীষণ জেদি , ব্রত তার ভাঙা গেল কই
আমিও বলিনা কিছু ,সেই থেকে তাম্র বনে রই ।
২.
কিশোরী শ্রাবণ দিনে ঝন ঝন কুলিশপাতন
ভয় পায় কোমলা হরিণী,তাও নেচে ওঠে রিমঝিম
চিকণ শরীর বেয়ে টুপটুপে প্রেম আশাবরী ।
আমি তো প্রেমিক ব্যাধ,পূর্ণ জানি শিকার কৌশল
মধুর নৃত্যের তালে সে তখন তাথৈ তাথৈ সুর
সমস্ত শরীর যেন লুফে নেয় ইশারার গান
এত যদি ভেজে কেউ দোষ কেন জ্বরের দেবীকে বৃষ্টি কী জানেনা কিছু!প্রেমালাপে জ্বর বেড়ে যায়
৩.
মাঝে মাঝে তীব্র শীতে কী নিশ্চুপ হরিণীর চোখ
যেন স্বজন হারানো শান্ত শেষ সফরের নদী
যত তাতে ঢেউ দাও ,লয় ,তাল বরফের স্তূপ
আমি তাকে হিম ভেবে স্পর্শ দিই সঞ্চিত উত্তাপে
বরফ গলেছে ধীরে জেগে ওঠে ভিতর মৌতাত
কমলা আগুন ছেঁকে ঠোঁটে নিই কফির পেয়ালা।
উঠোন ঝাঁপিয়ে রোদ,মৃদু হাত বোনে সোয়েটার
সোহাগের রেণু মেখে সে কী লাবণ্য বধূয়ার !
৪.
প্রিয় আপেল বসন্ত ,দূরে জ্যোৎস্নাখননের চাঁদ
কেন এত রিক্ত আমি চন্দনের মৃদু দখিনায় !
কোন গ্লানি মুছে দিতে বুকে জাগে মুসাফির নাম
হরিণী এসেছে কাছে ব্যথা খুঁড়ে কিজানি কী খোঁজে
ছায়াময় মুখ তুলে চেপে ধরে বুকের অনন্তে
লালিত দুঃখের রাত,স্পর্শে স্পর্শে মোহন পলাশ
ঘাসগন্ধ জিহ্বায় চেটে নেয় আমার স্থবির
জানা ছিল না তো আগে,মৃগ প্রেম অতল গভীর।
৫.
আকন্দ চাঁদের গালে দিন দিন বেড়ে যায় ক্ষত
অহরহ অভিমানে হরিণীও ফোঁটা ফোঁটা দূরে
প্রাচীন দুঃখের ফুলে কেন সাজো প্রেমের প্রতিমা!
ময়ূরের দ্যুতি নাও ,জন্ম জন্ম হৃদয়-মর্মর
আমি তো মুগ্ধ রাখাল,ওষ্ঠে দেখো সমর্পণী বাঁশি
এসো আমার অস্থিরে , ফুঁ দিয়ে বাজাই বিলাবল
যদি পাপ স্পর্শ করে এই ভেবে দূর শ্যামতীর্থে !
ব্রজমেঘে ঝড় ওঠে উঠে এসো শরীর -কুটিরে ।
৬.
চূড়ান্ত ঈর্ষার মেঘে ডেকে ওঠে কালের ময়ূর
এই অলোক সময়ে যেন খাঁ খাঁ বনের মাধুরী
হরিণী কোথায় তুমি? এসেছে সে কিরাতের বেশে
বাতাসে মৃত্যুর শিস ,পাখি-কান্না গাছের দুয়ারে
কোন্ মায়াময় বিষে তোমার সারাটা মুখ নীল!
হৃদয়ের ব্যথা চিরে ফেলে গেলে অমেয় কস্তরী!
প্রভু কী পাথর হলে !বাধা এত প্রেমের প্রবাহে !
চোখ খোলো সিমন্তিনী,জেগে ওঠো অনন্ত আগ্রহে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন