আফজল আলি-র গুচ্ছ কবিতা 





তোমার জন্য কবিতা

একটা কবিতা লিখতে হবে তোমার জন্য
যেখানে রাত্রিরা কথা বলে
বিছানায় শুয়ে থাকে স্বপ্ন
একটা কবিতা লিখতে হবে তোমার জন্য
যেখানে অনেক কিছু বলার থাকলেও
বলা হবে না কিছু
একটা কবিতা লিখতে হবে
তোমার জন্য
যেখানে ভালোলাগা শব্দটি হবে ময়ূর
আর দিনগুলো চেয়ে থাকবে বর্ষার দিকে
সুন্দর হয়ে উঠবে কথা
লিখতে হবে একটা কবিতা তোমার জন্য





চোখের গরিমায়

সুন্দরের জন্য একটা দীর্ঘ প্রত্যয় , চেয়ে আছে মুগ্ধতা
জানি একদিন সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে
বারান্দায় ডাকবে কাক
তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো উড়িয়ে দেব হাওয়ায়
তবু আজ মন বড়ো কষ্টে
অদ্ভুত যন্ত্রণা দাপট দেখাচ্ছে
এমনটা নয় যে  মেনে নিচ্ছো তুমি
এমনটা নয় যে আতরের গন্ধে পাগল হচ্ছি
একটা শহর থেকে আর একটা শহরের দিকে যেতে যেতে
দেখতে পাই লাবণ্যের কারুকার্য
না- বলা কথাগুলো সেমিকোলন যেন
একটু বিরতির পর পুনরায় শুরু করে চলা
শিউলির মতো ওরাও ঝরে যাবে তবু বলতে ইচ্ছা করে
চোখের গরিমায় দারুণ নেশা লেগে থাকে
তাকে কি শুধুই উপহার দেব রাত জাগা কষ্টের কবিতা
নাকি  আনন্দে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে আরো এক সমুদ্রর 





শিহরণ ঠেকিয়ে রেখে

অনেক স্নিগ্ধতার মাঝে তুমি এক ফুল
হারানো দিনের কাছে আকাশের ওই সুদীর্ঘ রেখা
জড়াতে চাইছে আবার
কীভাবে উপেক্ষা করি শালিকের চলাফেরা
ধানগাছে শীষ দেখা দেবে এবার
কিছুটা দূরে ট্রেনের আওয়াজ
বিড়ম্বনার বাইরে তোমাকে দেখি যেন শীতল-পাটি
সময় ক্ষয় হলে জড়িয়ে ধরি পুনরায়
দেখিনি কখনও তবু টান লাগে চেনা মনে হয়
নরম মন নিয়ে অন্ধকারের আড়ালে
ভয়ে ভয়ে থাকো  শিহরণ ঠেকিয়ে রেখে
যা বলা হয়নি , বলা হবেও না   হয়তো কখনও
জেনে রেখো সেখানেই আমি বাঁচি তোমার  অস্তিত্বকালে 





ভরাট হোক

চলো ভিজতে থাকি তোমার দুপুরে
আকাশ তো সেই ডিমের কুসুম
আর ভাগ্য পিঁপড়ের কামড়
দুঃখের শ্লোগানে মর্মরিত চিঁড়েকল
আর কিছু নয় শূন্য ভরাট হোক
চলে গেছে ঢেউ দূরত্বের কাছে
নিমফুল সওদা করে মালকিন-প্রহরে
তোমার অবাক মন রহস্যের চাদর
লজ্জা যেন ভ্রম , গালিচা বিছিয়ে রাখে
আমি পড়ি খেতের কবিতা
স্বপ্ন ঢাকে যেন তোমার নিরাপদ শহরে 






চিকন দ্রোহ

একাকিত্বের টেবিলফ্যান , আরও নির্জন হোক এই গোপন
একটা কোণ অসফল হচ্ছে , ফ্লাস্ক বড়ো আগন্তুক
ভীষণ আতঙ্কের সময় , না জানি কী হয়
আপন হচ্ছে না হাওয়া , তার শরীরে সংশয়
সমস্যার ভিতরে চিকন ব্যথা , ছুরি দিয়ে কাটছে না কথা
তলপেটে তবু লুকিয়ে রেখেছ , ওহ ওহ করুণ অবস্থা
চিলেকোঠা , তোমাকে লিখেছিলাম স্বপ্নের রঙিন চিঠি
তুমি উড়িয়ে দিয়ে ছাদ হলে যাতনা কাহারে বলে
আবেগ পুড়েছে  মোমবাতি হয়েছে নীল
চলে গেছো দূরে , কী জানি কত দূরে খবরের উর্দি পরে
ডাকলাম কত , নাছোড় হাতের বারান্দা ছিল
দুর্বল ভেবে শুধু দয়া দেখালে , টিয়াপাখি ওড়ে
মিহিন শরীরের ক্ষত , রোদে ঢাকা থাকে অবিরত
গভীর রাতে কে দেয় প্রলেপ , না না কেউ নেই,  দ্রোহ





তবু হার মানছি না

গল্পগুলো ছিল ভেঙে যাওয়ার যখন বৃষ্টি পড়ছিল সজোরে
কারণ যে কোনও ব্যবহারের আগে তা যাচাই করা হয়নি
একটা অপেক্ষা অপ্রকাশ পরবর্তী শুনানির জন্য
এমনি করে রাত সমাধিস্থ হয়
সকাল হয়ে ওঠে  মৃদু ভাষণে পটু
লাইনগুলো খুব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে , অসুখের হাতছানি
যা যা ছিল অস্পষ্ট  তা আমার মেনে না নেওয়ার কাল
তবুও হার মানছি না
নিয়তির কাছে মাঝে মাঝে হেরে গেলেও পুনরায় বিদ্রোহ করি
একটা জলের গ্লাস-ই যথেষ্ট
যাবতীয় গন্তব্যে এখন কোকিলের ডাক শুনি
উদাস হওয়ার অপর নাম বুঝি রোমান্টিসিজম
ওরা বোঝে না , চলে যায়
জামা গুছিয়ে আমি আবার stepping সাজাই পরবর্তী নিক্ষেপ






Uncut

দুপুর অপেক্ষা করছে , তুমি চামচ দিয়ে রোদ খাচ্ছো
কী অপূর্ব
পাখিরা গসিপ করছিল কারণ ওদের সময় হেলে গেছে
একটু পাশে বসো , চলে যেও না এখনই
উন্মাদ হতে বিচক্ষণ লাগে ,ভয় পেও না
দীর্ঘ আঘাতের পর পিঁপড়েগুলো হাঁটছে
এখন ভাঙা আন্দাজে আমি দুটো গাছ বসাব
এ হেন চিন্তা circulate হবে না
বুঝতে পারছি জীবিত রয়েছে কিছু অনুমান তাৎক্ষণিক শক্তিতে
পারদর্শী হতে গিয়েও তুমি বললে
এই সাধারণ মানের কাছে থাকব না আমি
প্রতিফলনে চোখ বুজছে দিন , হৃদয় তো এখন নরম শৌখিন
প্রাজ্ঞ সাজার কোনো মানেই হয় না
যা বলতে চাই সোজাসুজি যেন ডিম ফুটে বাচ্চা আসছে
কী হল  ?
তুমি দেখছি সেই আহত চাঁদকে থাপ্পড় দিয়েই ছাড়বে , বাব্বা 






Contrast

হৃদপিণ্ড খুলে রাখছ কেন , দেখছ না হাওয়া সচল
গোরুগুলো চরছে
শোক কাটিয়ে মানুষজন আবার হোটেলে
শ্যামল-বাবু জিন্দাবাদ
অর্থাৎ তোপধ্বনির বাইরে কিছু বলতে চাইছি
উপরে একটা সাজানো বাগান
ভিতরে অভিনয় করছি , চিনি বেশ সস্তা
শবনমকে লেখা কবিতাগুলো একটাও পাঠানো হয়নি
কারণ একটা কবিতাও লেখা হয়নি ওকে নিয়ে
বাহ , কী অদ্ভুত contrast
আমি কি বসে বসে গিনিপিগের দৌড় লক্ষ্য করছি
তেমন তো নয় যে ওরা আকাশে অবকাশ মেটাচ্ছে
আমি এখন চেয়ারে বসে , কিন্তু চেয়ার দাঁড়িয়ে
মানে আমার চেতনা বাঘ শিকারে
কিন্তু হরিণের তীব্র প্রতিবাদ যেন সিনেমার সেই দৃশ্য
ঘুমিয়ে গেছে বিড়ালটা
আগাম পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে বিকাল পাঁচটার জন্য 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন