দেবানন্দ ভট্টাচার্য-র গুচ্ছ কবিতা
কৃষি কথা
একজন অন্ধ এইমাত্র একটা গর্ত
পেরিয়ে হেঁটে চলে গেলেন। শুধু তাই-ই
নয়, অন্যের সাহায্য ছাড়াই বড়রাস্তাও
পার হয়ে গেলেন!
গাড্ডায় পা দিয়ে কর্দমাক্ত হলেন এক
চক্ষুষ্মান। তিনি কখনোই সমস্যা এবং
গুরুতর সংকটের মর্ম বুঝতে পারেন না।
একজন খঞ্জ খানিকটা হেঁটে পরখ করে
দেখছেন যে, বাকি পথটা কী ভাবে যাবেন!
একজন নিখুঁত যুবক বিনা পরিশ্রমে
গন্তব্যে যেতে চাইছেন!
সবকিছু কেমন জলের মতো সহজ
হয়ে যায়-----তাই কিনা বলুন! অনেকেই
বিস্তর সুবিধা আদায় করে বসনে ভূষণে
দিব্যি আছেন। যদিও কার্যসিদ্ধির জন্য
কাক ডাকা এক পুরনো প্রথা।
প্রবাদানুসারে রাষ্ট্রপোষিত বিশিষ্টদের কথা
উঠতেই পারে, তবে এনিয়ে ভাবছি না।
দেশের কৃষিকথার যোদ্ধারা সজাগ আছেন
এবং মাঠের লড়াইও........।
একলা এক মানুষ
একজন মানুষ একলা হেঁটে যাচ্ছেন
অবশ্য একা বলা ঠিক হবে না
কেননা তাঁর সঙ্গে হাঁটছে একদল গাছও।
অরণ্য নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে কিনা
বলতে পারবো না। একা একজন মানুষ ও
দলবদ্ধ গাছ----সবাই নীরব।
গতকাল রাতে পাহাড়ে মৃদু ধস্ নেমেছিল।
ছোটবড় পাথরও গড়িয়ে চললো পদযাত্রায়।
এবং শর্তসাপেক্ষে নিশ্চুপ নীরবতা।
আমার শেষরাতের ঘুম জড়ানো ক্লান্তিজুড়ে
সে-ই মানুষটির পায়ের শব্দ। পদযাত্রীদের
মর্মরধ্বনি আর পাথুরে ধুলোয় পাহাড়ি গন্ধ
টের পেয়েছি।কিন্তু লোকটাকে চেনা যায়নি।
দূরের রেখাচিত্র। অত্যন্ত অস্পষ্ট!
মোহিনীর সাদা কালোয়
তুমি রূপসায় নেমে যেতে না যেতেই
ক্ষমাসুন্দর নিষ্প্রভ সূর্যও
দিনের ইতি টানলেন।
ভৈরবকন্যা রূপসা
পদ্মার শাখানদী
ওকে নিয়ে কতো গান
ছবি ও কবিতা....
সন্ধ্যা নামে লঘু ছন্দে!
সময় ভাসছে রূপসার জলে
একলা ভেলার মতো।
কম্বলে মুড়ি দিয়ে রাত্রিও দীর্ঘায়িত হয়
চোখে ঘুম নেই। শেষ রাতে একটু যেন
ক্লান্ত তন্দ্রার ঘোরে, তুমি এসেছিলে!
মোহিনী! অন্ধকারের চেয়েও কালো
সবটুকু গোপনীয়তা রূপসার গতিপথে
দ্রুতগামী....এক ঝলক সোনালি আলো
ভোরের দিকে এগিয়ে চলেছে।
আগুনের গুঁড়ো
সোনালি মাছের চোখে শিশিরের জল।
যদিও এখন তা অতিরঞ্জিত অথবা
প্রচলিত নয়। চারদিকে ছড়ানো
আগুনের গুঁড়ো!
সুশোভন পাত্রে কি সাজানো সম্ভব?
নীলমাছি এসে বসে
স্বপ্নের কর্দমাক্ত দেহে ; ধলেশ্বরীর
কথা তা-ও প্রায় ভুলতে বসেছি------
যতবারই গ্রাম ভাবি
আমার শৈশব জুড়ে---বটতলার স্মৃতি
সারি সারি প্রতিমার নগ্ন কঙ্কাল!
এই পরিক্রমায়
কী এমন বিশেষত্ব ছিল এই পরিক্রমায়!
ফুলেও ছায়া পড়েনি পাতাও অম্লান
জলে জঙ্গলে পাহাড় ও উদাস হাওয়ায়
কোত্থাও তোমাকে পাওয়া গেল না।
কী এমন বিশেষত্ব ছিল এই পরিক্রমায়!
চর্যাপদে হদিশ মেলেনি, যমুনাকে বাঁয়ে
রেখে চলে গেছে পদাবলীর সকাল----
আমি হয়তো নিরুপায় এবং একদিন
ধ্বস্ত শ্রমিকের রক্তশূন্য মুখাবয়বে
খুঁজে পেলাম তোমাকে।
কী এমন এসে যায়, তুমি যদি পরিযায়ী
ভগ্ন ধূসর শ্রমনারী হও
কাঙ্ক্ষিত----বেমানান কিছুতেই নয়।
আদিম বীজ
একটি প্রাচীন বীজ প্রাচীন না বলে
আদিম বলাটাই শ্রেয়। যেহেতু এই সব
ফুল ফল খাদ্যশস্য অথবা তৈলবীজের
জন্মকথা----কারা কবে পৃথিবীর মাটিতে
প্রথম এসেছিল ; লিখিত ইতিহাসে এর
কোন তথ্যের চিহ্নমাত্র নেই।
আপাত একক বীজ হাতের তালুতে রেখে
অনাবশ্যক প্রথম দেখেছি। অমসৃণ কালো
ও বাদামি রং, ভিতরে চটচটে অণুমাত্রিক
শাঁস। কী ভীষণ শক্তি ধরে অতি ক্ষুদ্র এই
সব বীজকণা! ওদের সুবাদে ধরিত্রী হয়
সুজলা সুফলা। এমন বিরল দৃশ্য
যার কোন বিকল্প বা প্রতিপক্ষ নেই।
আদিম বীজ
-----------------
একটি প্রাচীন বীজ প্রাচীন না বলে
আদিম বলাটাই শ্রেয়। যেহেতু এই সব
ফুল ফল খাদ্যশস্য অথবা তৈলবীজের
জন্মকথা----কারা কবে পৃথিবীর মাটিতে
প্রথম এসেছিল ; লিখিত ইতিহাসে এর
কোন তথ্যের চিহ্নমাত্র নেই।
আপাত একক বীজ হাতের তালুতে রেখে
অনাবশ্যক প্রথম দেখেছি। অমসৃণ কালো
ও বাদামি রং, ভিতরে চটচটে অণুমাত্রিক
শাঁস। কী ভীষণ শক্তি ধরে অতি ক্ষুদ্র এই
সব বীজকণা! ওদের সুবাদে ধরিত্রী হয়
সুজলা সুফলা। এমন বিরল দৃশ্য
যার কোন বিকল্প বা প্রতিপক্ষ নেই।
কবিতা গুচ্ছের চূড়াটি সুতীক্ষ্ণ, খুবই অস্বস্তিকর, এখানে কবি--'পেরে ওঠা' আর 'ভাবনার ফসল পেরে ওঠা'চিমটি কাটার মতোই আমাদের মাথার মধ্যে এনেছেন। তবে এঁকে রাজনৈতিক কবি হিসাবে দাগিয়ে দেওয়া উচিত না।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ আপনাকে
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন