১৭ মে ২০২১ তৃতীয় বর্ষ ২৯ তম প্রয়াস
'এই ভুবনডাঙা ছেড়ে অন্য ভুবনে'- সংখ্যা



ছবি:- বিপ্লব দত্ত 

স্বপন দত্ত

জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি। নানারং মিথ্যের গুনগুন... ফিরবে ফিরবে। কোথায় যাবে। সব বানানো খবর।


আশ্চর্য। আশ্বাসের রং কি মরা শ্যাওলার মতো সবুজ। আমার তৈরি কুড়নো আয়নায় ওকে দেখতে পাচ্ছি না কেন। রাতারাতি এ বাড়ি ছেড়ে কোন বাড়ি ভাড়া নিল। আমাকে এ কোন দাসবাজারে বেচে দিল। নাঙ্গা ছেড়ে দিল। দরজাটাই যে এখন অচেনা।  কোন দরজায় টোকা মারবো। আমার তো থাকার কথা ছিল।  ছবি করা পান্ডুলিপির পাতায়। পাথুরে পাহাড়। পাহাড়টা লুট করা হল। মেরে ফেলা হল। আমি খসে গেলাম নাকি ও-খসে গেল।


আচ্ছা যখন সাগর উথাল-পাতাল শব্দ বেশি ও-ছিল। তখন কি আমার ওকে একটা ভরপুর দ্বীপের ছায়া খুঁজে দেওয়ার কথা ছিল। ভগবানের দোহাই আমার এই ডুকরে ডুকরে কান্না কথাটাকে একেবারেই বিশ্বাস করবেন না।

(শূন্য ঘরে শূন্যমনে শূন্যপায়ে পায়চারি)

_______________

সমরেন্দ্র রায় 

আমি অনেক গ্রাম দেখেছি,  দেখেছি কানাপুকুর।

ভগবানগোলার দিকে যেতে বড়োরাস্তার ডানদিকে গলিপথ। এখন সেটা অনেকটাই মসৃণ।  পাশে একটা পুকুর, জাঁকজমকহীন।  হয়ত বা এটাই কানা পুকুর। 

তবে জানান দেয় এযাবৎ স্মারকলিপি। এ তল্লাটে যতগুলো জানালা আছে,  সবটাই বন্ধ-মনন। 

কিন্তু এবাদুলের বাতায়ন সেদিনও খোলা ছিল, আজও আছে স্বমহিমায়। এভাবেই থেকে যাবে সাংকেতিক বিচ্ছুরণ। 


ওই জানালার সীমান্ত পেরিয়ে চলেছিল সংগোপনের লেখনীযাপন। আমাদের মতো অনেকেই ঘুরপাক খেয়ে ফিরে ফিরে আসি। আবার চলেও যায়, যাওয়াটাই নির্ধারিত বিনিময়। এ যেন কোনো জলাধার থেকে বার্তা নিয়ে মিশে যায় জনান্তিকে।


এখন থেকে শতবর্ষ পরেও এবাদুল-এর জানালা খোলা থাকবে নিশ্চয়তার বাতাসদেশে। সেদিন আমি বা তুমি, এমনকী ওই কানাপুকুরও থাকবে কিনা অনন্ত আমার অগোচর। তবে এটা নিশ্চিত বলা যেতে পারে হাওয়ার জোয়ারে অন্যকেউ ফিরে এসে বলবে...


হাঁ বলবেই "আবার এসেছি ফিরে।"

(এবাদুল-এর খোলা জানালা)

_______________

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


অতি সাধারণ একটা বাড়ি। আলাদা করে চোখে পড়ার মতো কোনো বিশেষ রঙ নেই। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যেন কোথাও একটা দাঁড়িয়ে পড়েছে। শুধু গোটা বাড়িটায় দেওয়াল বলে কিছু নেই। শুধুই জানলা। সবসময় খোলা থাকতো। বাইরের রোদে সবকিছু ভাজা ভাজা হচ্ছে ----- জানলা খোলা। এমন বৃষ্টি যে সবকিছু ভিজে যায় তখনও জানলা খোলা। হাড় কাঁপানো শীতে সবাই যখন যে যার মতো সম্বল নিয়ে কোণে ঢুকে পড়েছে তখনও দেখি জানলা খোলা। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ভাবতাম বোধহয় পোড়োবাড়ি। একদিন জানলায় চোখ দিলাম। একেবারে চোখে চোখ। দেখি ঘরের ভেতর একটা গোটা আকাশ। নক্ষত্র দেখে দেখে দুয়ার পেলাম। সমুদ্র জলে দাঁড়িয়ে দেখি দুয়ার জুড়ে একটা গাছ। ছুঁতে পারি না। দূর থেকে মুখে বলি ------ খোলা আকাশের নীচে এইভাবে দাঁড়িয়ে? হাসতে হাসতে সেই গাছ দু'হাত বাড়িয়ে বলে ----- চলে যেতে হবে না?

((গাছের গল্প) 

_______________

অশোক দাস 


কী সুন্দর, কী অপূর্ব নামখানি

"আবার এসেছি ফিরে "...

এবং " এবং পুনশ্চ "--

অথচ যিনি নাম দু'খানি 

রেখেছিলেন তিনি আর

রাখবেন না কথা--

তিনি চলে গেলেন মায়ার

ওপারে -  কবিতার জালবুনে

জীবনের এতগুলো সময়

কত বন্ধু কত সাথী সকলকে

হতাশ করে চলে গেল

বন্ধু এবাদুল --

তোমার জন্য রইলো কবিতার

এই লাল গোলাপ ফুল। 

(লাল গোলাপ ফুল)

_______________



দেবব্রত সরকার  


নিরবতা শুরু হলো তোমার বিচারে

প্ৰিয়জন চলে যায় সহ্যের বাইরে

কিছু কথা এঁকে যায় কালি আর কাগজে

কিছু নেই মনে তার  তুমি সমাজের বাহু যে

মন ভেঙে একতায় গায়ে ফেলা হয় মুঠো ফুল

প্রার্থনাই ... বার বার ফিরে এসো এবা-দুল ।

(নিরবতা)

_______________

সুকুমার সাহা


এবাদুল হক চলে গেলেন। তার কাজ শেষ না হয়েও শেষ হয়ে গেলো। ধারা ধরে রাখবেন নিশ্চয় তাঁর উত্তরসূরীরা।

প্রাণ- প্রাচুর্যে ভরপুর এবাদুলকে চিনি সেই ১৯৭৮ সাল থেকে। বেশ আকর্ষণীয় ছিল তাঁর কথা। কাছে টেনে নিতে পারতেন খুব সহজেই। ''আবার এসেছি ফিরে' তাঁর ধ্যান জ্ঞান ছিল বরাবর। 


নতুন নতুন ভাবনা, উদ্যোগ ও তার বাস্তবায়ন অবাক করত, আপ্লুত করত। এ উৎসাহে ঘাটতি ছিলনা আজও।

 

একবার উদ্যোগ নেওয়া হল মুর্শিদাবাদ জেলার এ যাবৎ প্রকাশিত সমস্ত পত্রিকার পঞ্জি তৈরী করার। পূর্বাভাস- এর আবুল কালাম, শব্দশাব্দিক- এর নুরুল আমিন ও আরও কয়েকজন মিলে শুরু হল কাজ। সালটা স্মরণে আসছে না ১৯৯২-৯৪ হবে। ছাপা হল প্রকাশও হল। দীর্ঘদিন যোগাযোগ ছিল না। সম্প্রতি ফেসবুকের দৌলতে আবার কাছাকাছি আসা। এ আসা কাছাকাছি রাখলো না। খারাপ লাগছে, টুকরো টুকরো অনেক ঘটনা মনে পড়ছে। পরিসর ছোটো সময় আরও ছোটো।


এবাদুল সবার মনে মননে বেঁচে থাকুক। তাঁর বিদেহী আত্মা শান্তি পাক। স্বজনেরা পাক স্বজন হারানোর ব্যথা সইবার শক্তি, কামনা করি।


(১৭/০৫/২০২১)

_______________

রাজকুমার শেখ 


কথা তো এমন ছিল না

তুমি যদি চলেই যাবে

তবে কেন চোখের জলে

আমার বুক ভাসালে?


(এত চোখের জল রাখি কোথায় এবাদুল)

_______________

নিমাই জানা


একটি ইমেইল আইডির উপর এবাদুল হক বসে আছেন প্রাচীন পরিসীমা নিয়ে


অহেতুক ভগ্নাংশের দিকে মুখ রেখে হেঁটে যাচ্ছেন একজন অক্ষরের মানুষ 

আগুনের দিকে তাকিয়ে কিছু কবিতার রিভিউ লিখতেই হাত কেঁপে উঠল দেবাশিস ঘোষের 

চুপ করে বসে আছেন নিয়ম ভঙ্গের বিনীত অক্ষরের কাছে 


এইতো ফিরে আসার গল্প 

পুনশ্চ বেদনায় তিনটি রাগ মিশ্রিত গান ধরলেন নিজস্ব সেতারে 

জানি নিরাময় সদন ছেড়ে যারা অনন্তের দিকে যাত্রা করে তাদেরও  শুভ হয় 

তিনি আগুন খেলেন ব্রহ্মতেজে জ্বলে উঠেছেন দাহ শক্তি নিয়ে 


নদীর স্রোতে নিজের হৃদপিণ্ডের দরোজাগুলো খুলে দিলেন উচ্ছ্বসিত হাওয়ার জন্য 

ঈশ্বরের জ্বলন্ত মশাল নিয়ে মাটির গভীরে চলে গেলেন 

রজনীগন্ধার আকাশে ঝরে পড়া রেণু দল

আমরা সংশ্লেষ অধ্যায়ের নিশ্চল শ্রোতা হয়ে গেলাম


আমাদেরকে কেউ অক্ষর করে তুলবে না জ্যামিতিক ক্ষেত্রফলে

(অক্ষর নাব্যতায় এক ডিভাইড ধ্রুবতারা)

_______________

আমিনুল ইসলাম 


শূন্য খাঁচা

দৃশ্যে ধূলো উড়িয়ে 

কিছু জলকণা 

বলে গেল ভালোথাকুন 


তুমি কি ভালো আছো!


মায়াবী আলো ঢেকে 

এই স্তব্ধ বাতাসের উসখুস 

বুকের গোপন ফিরিয়ে দিলে


১বার অন্তত দিয়ে যেতে জল 


তার কাছে আর ১টিও আয়না নেই সজল

কালচে দৃশ্যের বহুতল


১চিলতে রোদের অপেক্ষায়


জীর্ণ ১টি পালক এসে 

জানালেন!    ছায়ারা হাঁটছে ~

(ছবির অবতল)


রিতা মিত্র

  এ কেমন সকাল! 
প্রভাতি কিরণ বয়ে আনে মৃত্যু সংবাদ
 ক্রমশ চেনা পরিচিতির গন্ডি হয়ে আসে সঙ্কুচিত 
কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে পরিচিত চেহারা গুলো
না ফেরার দেশের পথ যে এক মুখি। 
চিতার আগুনে ঝলসে যাচ্ছে অন্তর আত্মা। 
হাহাকারের শব্দ তবুও পৌছায় না ঈশ্বরের কর্ণকুহরে। 
সভ্য মানব অসহায়, করো জোড়ে আকাশ পানে তাকিয়ে
যুদ্ধ লড়ছি অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে
বিজয়ের পথ দেখাও হে আল্লা, হে ঈশ্বর, হে জিসস।
 মারক  রোগ থেকে মুক্তি দাও পৃথিবীকে
মানুষ বাঁচলেই  তোমার বন্দনা বজায় থাকবে এ চরাচরে। 
নতুবা তুমি শুধু পাথরসম।

পাথরসম 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন