১লা মার্চ ২০২১ তৃতীয় বর্ষ ২৬ তম প্রয়াস
কবি গৌরাঙ্গ মিত্র স্মরন সংখ্যা
প্রচ্ছদ - বিপ্লব দত্ত
কবি গৌরাঙ্গ মিত্র
জন্ম-৯/১১/১৯৫৯
মৃত্যু - ১৫/১২/২০২০
আদ্যপান্ত লেখক গৌরাঙ্গ মিত্র
রিতা মিত্র
গৌরাঙ্গ মিত্র- র সাথে প্রথম পরিচয় বা পরিচিতি হয় কনে দেখা সুত্রে। তাঁর বাড়ির লোকেরা আমার দিদির বাড়ি( টালিগঞ্জ) এসে আমায় দেখে যান কিন্তু সেদিন পাত্র মশায় আসেন নি।তাঁর না আসার কারণ জিজ্ঞেস করায় তাঁরা জানিয়ে ছিলেন পাত্র বলেছে বাড়ির বড়দের পছন্দই তাঁর পচ্ছন্দ।আমি সাফ কথা জানাই পাত্র কে আসতে হবে আমি দেখতে চাই।
কথা মতো আরেক শনিবার পাত্র মানে আপনাদের গৌরাঙ্গ মিত্র নিজের দিদির সাথে টালিগঞ্জে আমার দিদির বাড়ি এলেন। দুপুর বেলা বলে আমার দিদি রান্না করে রেখেছিল। যাক সে কথা।
কিচ্ছুক্ষণ কথাবার্তা হবার পর আমাদের দুজনকে একা ছেড়ে দেওয়া হল কথা বলার জন্য। পাঁচ মিনির নিশ্চুপ ভাবে কেটে গেল। কেউ কিছু বলল না। আমি ভাবছি ও কথা বলবে আগে। সে তো মাথা নিচু করে বসেই রইল। আমার ধৈর্য আর সঙ্গ দিল না। আমি আগে বলা শুরু করলাম। এক নিশ্বাসের যা বলার বলে দিলাম। তারপর তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
বেশ কিছু সময় পর ডান হাত দিয়ে মাথার চুল ঠিক করে যা বললেন তা আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল। বাংলা অভিধান নিয়ে বসলে ভাল হোতো। তাও সারকথা যা বুঝলাম তাতে বোঝা গেল জাকজমকপূর্ণ বিবাহে অনীহা।
অবশ্য আমি নিজেও পচ্ছন্দ করতাম না।
বাড়ির লোকেদের বলেছিলাম ঠিক করে খোঁজ নিতে, ছেলে কী আদৌ বিবাহে ইচ্ছুক কিনা।
যাক শেষ অব্ধি আমরা বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হই।
বউ ভাতের পরের দিন সকালে দেখতে পেলাম, ঘুম থেকে উঠেই ব্রাস করে মাফলার কানে জড়িয়ে টেবিলে বসে কিছু লেখালেখি করতে আরম্ভ করেছেন। ভাবলাম হিসেবে - নিকেস করছেন, কত খরচ হয়েছে।
কিন্তু তারপর সময়ের সাথে দেখতে লাগলাম সকালে উঠে আর অফিস থেকে ফিরে সেই যে টেবিল- চেয়ার দখল করে বসেন তা রাত বারোটা - একটা পর্যন্ত চলে।
তারপর শনিবার এলেই দুপুরের খাওয়া দাওয়া পর নিয়ম করে কোথাও চলেজান। ফেরেন রাত সাড়ে নটা, দশটায়।
পরে জানলাম শনিবার তাঁর গন্তব্য কবিতা পাক্ষিক দফতর।
ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ল। তিনি লেখক , কবি, প্রাবন্ধিক। কবিতা পাক্ষিক নামক পত্রিকা বের হয়, এবং তিনি সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য।
অনেকগুলি কবিতার বই ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে।
ধীরে ধীরে আমিও কবিতা পাক্ষিক পত্রিকা পড়া আরম্ভ করি। কত লেখক। তাদের প্রত্যেকের লেখার এক অন্য ধরন। যদিও আমি প্রবাসী বাঙালি, এবং পড়াশোনা হিন্দি মাধ্যমে, তবুও বাংলা একটা বিষয় হিসেবে ছিল। সেখানে যা কবিতা পড়েছি সেগুলো সব ছন্দময় । এখানে এসে যা পড়তে আরম্ভ করলাম সে এক অন্য ধরনের, বুঝতে অসুবিধা হত। পরে গৌরাঙ্গ বাবু পড়ে পড়ে বুঝিয়ে দিতেন।
বই কেনার একটা নেশা ছিল। বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে সংগ্রহে।
বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বই কিনতেন।
বিদেশি লেখকদের লেখা বইও কিনতেন। বলতেন বিদেশি বই না পড়লে জানব কী করে যে এখন বিশ্ব সাহিত্য কোন দিকে যাচ্ছে।
ঘুরতে খুব ভালোবাসতেন। বিশেষ করে অফ বিট জায়গায়। বেড়াতে গিয়ে এমন আত্মিয়তা গড়ে তুলেছেন যা আজও বজায় আছে। যেখানে যেতেন সেখানকার স্হানীয় মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের খাওয়াদাওয়া, তাদের রীতিনীতি সব জানার বড়ো আগ্রহ ছিল তাঁর।
ভ্রমণের এই সব অভিজ্ঞতা লিখে রেখেছেন কতগুলি ভ্রমণের বইয়ের মধ্যে।
সুরের রুগি ছিলেন। ইনসুলিন নিতে হত দুবেলা। আর এই রোগের জন্য ধীরে ধীরে শরীর দূর্বল হতে শুরু হয়। মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হতে হয়েছে।
তবুও লেখা থামেনি। ধীরে ধীরে চোখের সমস্যা আরম্ভ হয়। রাত জেগে লেখা। অফিসের কাজের চাপ সব মিলিয়ে খুব চাপে থাকতেন। অনেক বার বলেছি লেখালেখি ছেড়ে দাও। কিন্তু তাঁর বক্তব্য চাকরি ছাড়তে পারি, লেখালেখি নয়। তাহলে আমি বাঁচব না।
2016 সালে চোখে অস্ত্রপচার হয় বাঁ চোখে। একটা নয় বেশ কয়েক রকমের কিন্তু ফল হয়নি। তাঁর বাঁ চোখের দৃষ্টি শক্তি চলে যায়।
তারপর 2017 সালে ডান চোখে হ্যামারেজ হয়। ক্ষীণ হয় দৃষ্টিশক্তি।
2018 সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর নেন।
কিন্তু লেখা চলতে থাকে কাগজের উপর টেড়াবেকা অক্ষরে।
ইতিমধ্যে আমিও লেখার জগতে পা রেখেছি। অল্প বিস্তর লেখা ছাপা অক্ষরে বেরিয়েছে।
তবুও তাঁর লেখায় সাহায্য করতে চেষ্টা করতাম। তিনি বলে যেতেন আমি লিখতাম। তাকে বই পড়ে শোনাতাম। কিন্তু ঘর সংসারের কাজ করে বেশি সময় দিতে পারতাম না। তাই একজন লোক রাখা হল। যে তাঁকে বই পড়ে শোনাবে এবং তিনি যা বলবেন তা লিখবে। বেশ ভালই চলছিল। কিন্তু গত বছর যেদিন প্রথম লকডাউন ডাকা হল, সেদিন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারাজান।
সেটায় একটা মারাত্মক ধাক্কা খেলেন তিনি। তারপর তাঁর নিজের শরীর খারাপ হতে আরম্ভ করে। এই করোনা কালে ভীষণ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ি তাঁকে নিয়ে দীর্ঘ ছয় মাস নানান বড়ো বড়ো হাসপাতালে থেকে ডায়লিসিস এর চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু অদৃষ্টের লেখা। আমরা সকলেই অসহায়। 15/12/2020 তিনি আমাদের ছেড়ে চলেজান।
কিন্তু নিজের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছেন। 13/12/2020 পর্যন্ত তিনি লেখা চালিয়ে গেছেন। তাঁর অপ্রত্যাশিত অনেক লেখা আমার নোটপ্যাডে স্মৃতি হয়ে রয়েছে।
সকালেই লিখেছিলাম 'মর্মস্পর্শী’। এখন দেখছি সেটা নেই। তাই আবার বলছি 'মর্মস্পর্শী’।
উত্তরমুছুনসকালেই লিখেছিলাম 'মর্মস্পর্শী’। এখন দেখছি সেটা নেই। তাই আবার বলছি 'মর্মস্পর্শী’।
উত্তরমুছুনসকালেই লিখেছিলাম 'মর্মস্পর্শী’। এখন দেখছি সেটা নেই। তাই আবার বলছি 'মর্মস্পর্শী’।
উত্তরমুছুনসকালেই লিখেছিলাম 'মর্মস্পর্শী’। এখন দেখছি সেটা নেই। তাই আবার বলছি 'মর্মস্পর্শী’।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন