নাগরিক উপকথা

প্রদীপ চৌধুরী

শহরের ব্যস্ত স্কোয়ারে এখন ভীড় করেছে

আমাদের প্রিয় লোকজন, কে একজন

দুই হাত উপরে তুলে মুঠো মুঠো আগুন

কার মুখের উপর ছুঁড়ে দিচ্ছে

আর তার ১ ফুট দূরে কামানের গোলার মতো

চোখ বড় করে আরেকজন, সরাসরি

সিনেমা পোস্টারের দিকে তাকিয়ে আছে ।

এসো, আমরা সেখানে গিয়ে দাঁড়াই !

একজন যুবক আমার কাছে হঠাৎ চেয়ে নেয়

দেশলাই ! সিগ্রেট না জ্বেলে

সে হঠাৎ ছুটে যায়, কিছু দূরে

বিশাল বাড়ির সামনে; পকেট থেকে

বোতল বের করে যুবক সারা গায়ে

ছড়িয়ে দেয় পেট্রোল

মাত্র একটি কাঠি প্রস্তুত শ্রেণীর মত,

দপ্‌ করে জ্বলে ওঠে চোখ,

চারদিকে বাঁধভাঙা পাখির সঙ্গীত—

স্বাধীনতা, এসো তার পুড়ে যাওয়া দেখি !


মিথ্যা নিয়মের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাবা

কাউকে রেহাই দেয় না, তাই তো বালিকা

কেবল একবার হারিয়ে যাওয়া অপরাধে

আর ফিরে যেতে পারেনি মনিহারি-

মেলা থেকে আলের ধারের ঘরে,

মই লাগিয়ে একদিন আব্রুহীন রাস্তা থেকে তাকে

উঠিয়ে দেয়া হয় গম্বুজনগরে;

সেখান থেকে রোজ সন্ধ্যায় চুঁইয়ে পড়ে

বীর্য ও আতরের গন্ধ— এসো,

নতমুখে কাঁপতে কাঁপতে আমরা

অপেক্ষা করি, কাঁদি ।


এই ধারাবাহিকতা একদিন খোলসের মতো

সকলের শরীর থেকে খসে পড়বে

যেদিন লালাভেজা জড়িয়ে থাকা

শরীর থেকে তুমি ছাড়িয়ে নেবে নিজেকে

আর আমাদের সম্মিলিত উত্তাপ

ছিঁড়ে কুটি কুটি টাইফুন মেঘের মতো

নিজেকে আছড়ে দেবে ১ জন কবির কাছে

তুমিই কবিতা, তুমি কাছে এসো !


পূর্ব গোলার্ধের সবাইর সঙ্গে আমরাও

দেখব একদিন অস্তগামী সূর্য

গলিত সোনার মতো শরীর বিছিয়ে দিয়েছে

শহরের আর গ্রামের

গ্রামের আর শহরের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে

আর তখুনি পিঠভর্তি চুল এলিয়ে

গম্বুজ থেকে রাস্তায় নেমে এসেছে

আমাদের বোন;

তার মুখে গর্বিত ও অর্থপূর্ণ হাসি ।


৩০.১১.২০১৬

টুকরো লেখা-৩

প্রদীপ চৌধুরী


আর অন্ধকার নেই; ধূসর আকাশ জামা-পাজামার মতো

আমার স্বাভাবিক ব্যবহারের মধ্যে চলে এসেছে ।

দিন রাত্রি আমার কাছে সমান দরকারী, আমি

যখন কাজের পর ঘুমিয়ে পড়ি—সে কি ঘুম !—

আর আবরণহীন শরীরে আবরণহীন স্বপ্নে

জড়িয়ে যাই

এই ভূখণ্ডের নরনারীর প্রতিরোধহীন চিৎকার ও

ছুটোছুটি আমাকে স্পর্শ করে না

অথচ অলিখিত দূরত্বে তখনো কেউ

ভীড়ে একা হেঁটে যাচ্ছে

…একটি যুবতী কিছুতেই বাথরুম থেকে বেরোতে পারছে না

…একজন আততায়ী তার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে

অবাক হতে পারছে না

…দাবী আদায়ের বহু পরেও একজন কর্মচারী

মিছিল থেকে বেরুতে পারছে না

…আমার বান্ধবীটি কিছুতেই বলতে পারছে না

ক্ষুধা আগুনের মতো সর্বত্রগামী—

জামা-পাজামার ও আকাশের মতো সহজ ও অফুরন্ত ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন