ভুবনডাঙায় হাংরি আন্দোলন: সম্পাদকীয় লেখার সুযোগ

মলয় রায়চৌধুরী

আমিনুল ইসলামকে ধন্যবাদ দিতেই হয় এই বিরাট কাজটায় হাত দেবার জন্য । এতো ওয়েবজিন আর ব্লগজিন রয়েছে কিন্তু কেউই চাড় দেখাননি সমস্ত হাংরিদের কাজকে তাঁদের কোনো সংখ্যায় একত্রিত করে পাঠকের সামনে উপস্হিত করবার । আমিনুল ইসলাম ঠিক সেই কাজটিই করেছেন। আমি নেট খুঁজে বিভিন্ন হাংরি আন্দোলনকারীর কাজ সংগ্রহ করে আমিনুল ইসলামকে দিয়েছি যাতে উনি রচনাগুলো সাজিয়ে তুলতে পারেন । বহু পাঠক কেবল কয়েকটা নামই জানেন এবং যাঁরা জানেন তাঁরা হাংরি আন্দোলনকারীদের অবনিবনা আলোচনা করতেই আগ্রহী । এক্সপ্রেশনিজমের পর থেকে যে সমস্ত সাহিত্য-শিল্পের আন্দোলন হয়েছে, যেমন ইমেজিজম, লস্ট জেনারেশন, ডাডাইজম, মেক্সিকোর স্ট্রাইডেন্টিজম, মেক্সিকোর লস কনটেমপোরানোস, হার্লেম রেনেসঁস, অসট্রেলিয়ার জিণ্ডিওয়োরোবক আন্দোলন,

ফ্রান্সের পরাবাস্তববাদ, অ্যাবসার্ডিস্ট আন্দোলন, ব্ল্যাক মাউনটেন আন্দোলন, স্পোকন ওয়র্ড আন্দোলন, পারফরমেন্স পোয়েট্রি আন্দোলন, বিটনিক আন্দোলন, স্ল্যাম পোয়েট্রি আন্দোলন, কনফেশানাল পোয়েট্রি আন্দোলন, স্পাইরালিজম আন্দোলন, প্রতিটিতেই সদস্যদের মধ্যে অবনিবনা হয়েছে ; কিন্তু আলোচকরা তাঁদের অবনিবনাকে গুরুত্ব দেন না । সবচেয়ে বেশি অবনিবনা এমনকি হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে পারাবাস্তববাদীদের মধ্যে ; তা কখনও আলোচ্য বিষয় হয়নি পরাবাস্তবতা বিশ্লেষণের সময়ে । গুরুত্ব পেয়েছে সদস্যদের অবদান । ঠিক তেমনই হাংরি আন্দোলনকারীদের অবদান পাঠকের সামনে তুলে ধরা যে খুবই দরকার তা সম্পাদক-আলোচক কিংবা ব্লগ বা ওয়েব পরিচালকরা এতোকাল চিন্তা করেননি । ষাটের দশকে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অনেকেই মারা গেছেন। পরে যাঁরা আবার গতি আনতে সচেষ্ট হয়েছিলেন,  তাঁরাও নিজেদের লেখা তুলে ধরতে বা অগ্রজ আন্দোলনকারীদের আচরণ নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী । পাঠকরা হাংরি আন্দোলনকারীদের কাকে কেমন দেখতে ছিল আর যারা ছবি আঁকতো তাদের সেই ছবিগুলো কেমন তা কেবল অনুমান করে নিয়েছেন, নিজেদের চোখে দেখেননি । এই ব্যাপারেও আমিনুল ইসলামকে ধন্যবাদ দিতে হয় যে তিনি তাঁদের ফোটো আর আঁকাকেও জায়গা দিয়েছেন । রচনা বা আঁকা আমি সংগ্রহ করেছি নেটের বিভিন্ন সাইট থেকে -- দুই বাংলায় যাঁদের সাইট থেকে নিয়েছি, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, কেননা তাঁরা অন্তত নানা সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনকারীর রচনা প্রকাশ করে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন । হয়তো কেউ বাদ গিয়ে থাকবেন । হাংরি আন্দোলন ছিল সাম্রাজ্যবাদ-পরবর্তী উত্তরঔপনিবেশিক আন্দোলন ; অর্থাৎ  কাউকে ‘অপর’ তকমা দিয়ে বাদ দেবার চিন্তা এই আন্দোলনের তত্বে ছিল না, তা সে যতোই তর্কাতর্কি আর অবনিবনা হোক না কেন। আমি কখনও কাউকে বাদ দিইনি, তা আমার সম্পাদিত ‘জেব্রা’ পত্রিকা পড়লেই পাঠক টের পাওয়া যাবে, যার সংখ্যাগুলো সম্প্রতি মুর্শিদের সম্পাদনায় একত্রে প্রকাশিত হয়েছে । সব শেষে ভূবনডাঙা ওয়েব-পত্রিকাকে আরেকবার ধন্যবাদ জানাই ।

মুম্বাই

১লা জানুয়ারি, ২০২১

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন