অভিমানের আগে

অরণি বসু

তুমি অভিমানে ফিরিয়ে দিয়েছ তাই আজ এই অন্ধকারে
তুমুল গর্জনে মাতে সামুদ্রিক হাহাকার।
সৈকত শহর জুড়ে চাপা গুঞ্জরণ ছড়িয়ে পড়ে ক্রমশ।

তোমার অভিমানের বদলে আমি তবে একা হেঁটে যাব অনন্তকাল —
মুঠো খুলি, মুঠো বন্ধ করি।
অন্ধকার, কোলাহল, নিষ্ঠুরতা আর কৌতূহল পেরিয়ে
আমি চলে যেতে চাই অন্য এক পৃথিবীর দিকে।

সতরঞ্চি গুটিয়ে তুমিও চলে এসো,
ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দাও পুরোনো যত ক্ষত,
আলো, আলো জ্বলে উঠুক আবার।

জলতরঙ্গ

আমাদের টেলিফোন নেই, ফ্রিজ নেই, জলতরঙ্গ আছে।
আমাদের গ্রীষ্মকালীন দার্জিলিং নেই, গাড়িবারান্দা নেই, জলতরঙ্গ আছে।
জলতরঙ্গ বলতে তোমরা কি ভাবছো জানি না,
আমাদের জলতরঙ্গটা মাত্র সাড়ে সাত টাকার,
আমার ছেলের প্রথম জন্মদিনে আমি উপহার দিয়েছিলুম।

তো এই সাড়ে সাত টাকার জলতরঙ্গ নিয়ে এতো কথা কেন ?
আসলে আমাদের জলতরঙ্গটা আর ঠিক জলতরঙ্গ নেই,
ওটা এখন আমাদের বাড়ির রাগ কমানোর যন্ত্র।
আমি যখন কোনো কারণে রেগে গিয়ে চেঁচামেচি করি
তখন আমার স্ত্রী আস্তে আস্তে জলতরঙ্গ বাজাতে থাকে।
আমার স্ত্রী যখন রেগে যায়, প্রায়শই যায়, এমনকি খুব তুচ্ছ কারণেও,
তখন আমি জলতরঙ্গ বাজাতে আরম্ভ করে, আর
যেদিন কলে জল থাকে না, ডাল সেদ্ধ হয় না,
বাজারে মাছের দাম অসম্ভব চড়া কিংবা ঘন্টার পর ঘন্টার লোড-শেডিং
সেদিন আমরা দুজনেই, যাকে বলে, একেবারে ক্ষেপে উঠি,
যখন আমরা সমস্ত দাঁত, নখ আর জিভ বার ক’রে
ছুটে যাই পরস্পরের দিকে,
তখন আমাদের ছেলে জলতরঙ্গটা বাজায়।

আশ্চর্য, জলতরঙ্গ বাজতে থাকলেই আমাদের রাগ পড়ে যেতে থাকে,
রাগ পরে যেতে যেতে, সত্যি বলছি,
আমরা আবার মুচকি হেসেও ফেলি।
আমাদের টেলিফোন নেই, ফ্রিজ নেই,
আমাদের ফিক্সড্‌ ডিপোজিট নেই, ভালোবাসায় উচ্ছ্বাস নেই,
তবু যে জলতরঙ্গটা আছে, সেই জন্যেই,
হ্যাঁ, সেই জন্যেই, জানো, আমরা এখনো টিঁকে আছি।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন