শৈলেশ্বর ঘোষ ও তাঁর কবিতা

রমিত দে

“এখন আমি বুঝতে পারি দন্ড দেয়া হয়ে গেলে- প্রত্যাখান একবার হয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিথ্যা- কারন তা ফেরান যায় না। মিথ্যা এই জন্য যে মানুষের একজীবন খুবই ছোট এবং যা কিছু ঘটে যায় তার প্রতিবাদ করলেই তা যে ঘটেছে এটাই শেষ সত্য হয়ে থাকে......”

এই মুখভঙ্গীটাই যেন দেখাতে চেয়েছিলেন শৈলেশ্বর ঘোষ। ষাট দশকের কবিতার আবেগীমাধুরী আর প্রথাস্বাচ্ছল্যতার প্রচল চেহারাকে ভেঙ্গে দিতে মরুমরীচিকার মত যে হাংরি কিংবদন্তী তা যেন আজও এক রক্তক্ষরন, তেজস্ক্রিয় বোমার মত কবিতার শিরাতির্যকে ছড়িয়ে রেখেছে  আত্মধ্বংসের লোনা স্বাদ ।

যে হিপনোটিক স্পেলকে অ্যাকিউজড করেও সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করতে পারেনি বুর্জোয়া এসটাবলিস্টমেন্টে ভরপুর বাংলা কবিতার প্রত্ন জাদুঘর। ১৯৬১ থেকে ৬৪-মলয় রায়চৌধুরি, সুবো আর্চায, বাসুদেব দাশগুপ্ত , ত্রিদিব মিত্র , দেবী রায়, বা সুভাষ ঘোষের সাথে একযোগে বাংলা সাহিত্যের আভাগার্দ হাংরি জেনেরাশনের অন্যতম পথ খননকারী শৈলেশ্বর ঘোষ। যদিও পরবর্তীকালে প্রচলিত কবিতার বিপক্ষে হাংরি জেনেরেশনের নবমূল্যায়নের চেষ্টা করেছেন ‘ক্ষুধার্ত’ পত্রিকার সংকলনের মাধ্যমে( ১৯৬৮- ক্ষুর্ধাত ১ ম সংকলন)। ১৯৮৪ তে মোট ৭ টি সংখ্যার পর ‘ক্ষুর্ধাত’ বন্ধ হয়ে গেছে, ক্ষুধার বিশাল মুখব্যাদানের মধ্যে অভ্যেসের ভাষা নিয়ে হয়ত একে একে হারিয়ে গেছে ক্ষুর্ধাত প্রজন্ম কিন্তু এই দাসবৃত্তির বাইরে শৈলেশ্বর ঘোষের মত কিছু সর্বহারা অভিযাত্রিক উত্তরাধিকার ছাড়াই কম্যুনিকেট করতে চেয়েছেন মূল্যহীন কালোজীবন আর মানুষের ইতিহাস, জন্মান্তরের ঠিকুজী থেকে আবিস্কার করতে চেয়েছেন আত্মার বন্দীত্ব , এই ধোঁয়াসা এই ধ্বংসস্তুপের ভেতর , এ্যাস্টিবলিসমেন্টের ভেতর , পিষ্ট নিক্ষিপ্ত মুখোশের ভেতর লুকিয়ে থাকা মুখগুলিকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা জেনেও কোনো পূর্বস্মৃতি ছাড়াই নতুন এক পৃথিবীর দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন অবক্ষয়ী সরীসৃপের খসে পড়ার শব্দ নিয়ে। কবি আর কবিতা সম্পর্কে শৈলেশ্বর ঘোষের আক্রমনই তার সম্যক কবিতাজীবনের রিলেশনগুলিকে আমাদের সামনে তুলে ধরে-“ বাংলাদেশে আমি ও আমার গুটি দুই বন্ধু যখন কবিতা লিখতে শুরু করি তখন আমাদের সামনে মাত্র ৮/১০ টি কবিতা ছিল, যার রচয়িতা জীবনানন্দ দাশ। আর কিছু ছিল না, সব ধূ ধূ। সে সময় আমরা এদেশের কয়েকজনকে’বিদ্রোহী কবি’ বিশেষনে ভূষিত হতে দেখেছি এবং পরে ঐ বস্তাপচা শব্দ আমাদের উপরেও দু একবার প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিদ্রোহী কবি বলে কোন পদার্থ আছে কি? না, নিশ্চিত ভাবেই নেই। কেবল কবি আছে, ‘কবি শব্দই বিদ্রোহ বাচক, কারণ জীবনের ষড়যন্ত্রময় বস্তুসমূহের মারাত্মক অবস্থানকে যে মেনে নিতে অস্বীকার করে ও বেঁকে বসে সেই কবি ”........।‘ আসলে  হাজার বছরের গোবর টানতে রাজি হননি শৈলেশ্বর’। স্থবিরতা নয়, বস্তা পচা নিঃসঙ্গ রিরংসা নয়, তার কবিতায় বার বার উঠে এসেছে আত্মআবিস্কার,  পুরোনো পোশাক ছেড়ে ফাঁকিগুলো চিনে ফেলতে বারবার প্রশ্ন করেছেন একই অক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বিচ্ছিন্ন মানুষকে, ক্রমাগতা ভাঙা এবং মেলে ধরা, অন্ধকারে ফুটে ওঠা অন্তর্দন্ধের মধ্যেই তার মুক্ত কবিতার ইস্তেহার। স্রষ্টাদের পারস্পরিক অভিমানের বাইরেও বাংলা সাহিত্যে হাংরি যে আজও একটা জেনেরেশন তা যেমন অস্বীকার করা যায়না ঠিক তেমনই পরস্বরহরনকারী চিৎকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে শৈলেশ্বর ঘোষ যখন লেখেন-“কবিতারই শুধু রক্তপাত/ দাতব্য চিকিৎসালয় খুলেছি আমরা পেচ্ছাবখানায়/ কোলকাতা গলে যায়- হৃদয়ে সঙ্গমসূত্রউৎপাত ইত্যাদি/ ধোয়ামোছা হয়.....”..তন্দ্রাচ্ছন্নে থাকা বাংলাকবিতার প্রিজমের বাইরে আমরা যেন টের পাই পুনরভ্যুত্থানের দিকে গ্লানিহীন আত্মার সংগীত..........সমগোত্রীয় কাব্যজগতের উল্লাস নয়, শৈলেশ্বর ঘোষ বারবার একঘরে হতে চেয়েছেন দিকবদলের নিশান নিয়ে.....






পুরোনো মাংসের মত


-১-

এখান থেকে আমি আর কারও মৃত্যুর নিরঙ্কুশ শব্দ শুনতে পাব না

এখনও একইভাবে এখানে ঝরে যায় জল- জাহাজ

বিপনী সংকেত আসে যায়,

এ কোন পাড়াতে আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি? এসব কিসের শব্দ

ঈশ্বরের পতন না বেশ্যার উচ্চহাসি,

শৈশবের ধূলো আঙ্গুলে উঠে আসছে না

খুনীর আংগুলের মত এ আংগুল নিমিত্ত শরীরে বসে যায়

ধ্বংসের দাগ দেখিয়ে বলে ‘ এই আমার ভালবাসা, কিন্তু

ধ্বংসের যোগ্য আগুন জ্বালাতে পারে না মানুষ, তল্লাট

ভরে কেবল ছিঁড়ে পড়ার শব, ভয়- দুর্ঘটনাময়

রান্নাঘরে গোপনে আমরা পরস্পরের মুখ দেখে নেব

চোখের কোনে জলের দাগ থাকলে মুছে নেব, চোখে

ক্রুরতা থাকলে সে কার্যক্রমও শেষ করে নেব, পুরানো

মাংসের মত বেদনা ঢেকে রেখে তারিফ করে যাব পরস্পরের

এ কবিতা মুছে দিতে পারে না ৩০ বছর আমার –ফিরে

দিতে পারে না নষ্ট সামগ্রী, আমি চাইনা শুধু দুঃখের

ভাষায় জীবন বলে যেতে, মিলনের বিছানায় বিচ্ছেদের

গান আমি শোনাতে চাই না, আমরা তো বিছানা পেতে

দিয়ে আত্মগোপন করে থাকি বিচ্ছেদের কান্না শোনার জন্য

যা আমাদের ভালবাসায় তাই সর্বনাশ পরিচ্ছেদ পূর্ণ করে রাখে।


-২-

সশব্দ একা বহুরাত আমাকে বসে থাকতে হয়

কোথাও যুদ্ধের গোলা ফাটে, কংক্রীটের ভিত টলে যায়

জানলা বন্ধ হয় এক এক- মনে হয় কোন স্তব্ধতা আছে

আঘাতেও যার সূচীভেদ হয় না, সেখানেই জন্ম,

জন্মান্তর- মেয়েদের হাতে পুরুষের বীর্যরস,

সহবাসের ঘোরে এক জীবন- এ মঞ্চের পর্দা পড়ে গেছে

হলুদ ঠিকুজির শেষ পাতায় আমাকে শুধু বুড়ো

আংগুলের ছাপ দিতে হবে।


কালো জীবানু


কালো জীবানু কর্কট আয় এই হৃদপিন্ডে বাসা বেধে তোল

যে কালো হাতে আমি স্বপ্ন ও স্ত্রীলোক নিয়ে খেলা করেছিলাম

যে কালো স্বপ্ন আমার বুড়ো কুকুরের মত শেষবার চেঁচিয়ে উঠতে

চেয়েছিল, তার পিঠে ঐ কষাঘাত, হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, আহারে

আমার সঙ্গে আরেকবার যাবি, বেশ্যারা যেভাবে পা তুলে ঘুমায়

দেখবি, কালো জীবানু কর্কট, আয় এই শরীরে তোর দুর্গ কার্যকারী

গলা দিয়ে সকালবেলা ভাঙ্গা স্বর শুনে চমকে উঠবে সবাই

এবং আশ্বস্ত  হবে কালো মানুষের কালো হাত- এভাবেই

মাখামাখি হয় ভালবাসাবাসি হয় আমাদের, শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে

তারই ঋন শোধ করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আমরা-


চিৎ হয়ে পড়ে আছি আমিও, যারা মরে গিয়ে অমর হয় তাদের মত

এবং যেসব হতভাগা চিৎ হয়ে  অপেক্ষা করছে-কেউ কোনদিন

শরীরের বোঝা নামাতে এসে ভয় পেয়ে ফিরে যাবে, কালো

শব্দের গান কালো রক্তের চুইয়ে পড়া- কালো আত্মার শিস শুনে

ওতপ্রোত হবে এরা পরস্পর

কালো জীবানু কর্কট আয়ু আমাদের অঙ্গে ও যৌনাঙ্গে অলঙ্কার

ও, অসুখ, বাঁচাতে শিখিন আমরা শিখিনি পরিজন নিয়ে রাত

কাটাবার গৌরব- তোর গুপ্ত প্রচলন দাম হিসাবে নেবে

জিহ্বা আধখানা, সেদিনও ভগবানের নামে পুনরুত্থান চাই না

বলে দিয়েছিলাম কত গালাগাল, আমৃত্যু অপভ্রংশ বিদ্রোহী

চেয়ে যাবে একফোটা জল? কালো জীবানু কর্কট আয় --


মালিক


জলও আমার নৌকাও আমার, মালিকের কথা ভাবা ভুল

অনেক টানাপোড়েনের ফলে মূর্হুতের জন্য ফুটেছিল ফুল,

অনেক খুঁজেছি তোকে জুলেখা,অনেক ভালবাসা এসেছিল,অনেক বকুল,

মধ্যরাত্রি পার হল- তারাগুলি কথা বলছে, এখনই সময় অনুকূল

এক বোতল ধেনোর প্রভাবে জুলেখা হয়ে যাবে জবাকুসুম

গাঢরাত্রির এই উদ্ভাসনে পেঁচারও পেয়ে যায় ঘুম –

মালিকের ধান কেটে নিয়ে গিয়ে চোর সেজেছে কল্পদ্রুম

জুলেখা যেসব পুরুষের সেবা চায় আমি ছিলাম তাদেরই একজন,

স্তন যোনি অতিক্রম করে আনন্দ পায়ুতে এখন!

বিগ্রহ কাঁদিস না তুই- এই কালো, সে আমারই প্রতিফলন-

হৃদয়ে যে বিস্ফোরন হয়েছিল বহু কোটি বছর পরেও শুনছি তারই অনুরণন!


অস্ত্রের কারখানা পাহারা দেবার জন্য অস্ত্রধারী আছে,

মানুষের রক্ত দিয়েই মানুষ ফুল ফোটায় ফনীমনসা গাছে,

যেখানেই যাই আমি আমার অমানুষটি লুকিয়ে থাকে ঠিক তার কাছে

বাঁচার জন্য গরীব বাপ জুলেখাকে একদিন দিয়েছিল বেচে,

রাত্রির তপস্যা ব্যর্থ হয়, হারানো আকাশ পাখি এখনও চলেছে খুঁজে।


জুলেখা যখন খুন হয় তখন একমাত্র আমাকেই ছিল তার প্রয়োজন

আমার সবকটি স্নায়ু উত্তেজিত হয়- হিম ঠোঁটে দিলাম যখন শেষ চুম্বন!

কোন পারেই পৌঁছবে না নৌকা, দুপারেই দাঁড়িয়ে আছে বহু লোকজন,

এখন জলের মালিক এক ব্যক্তি – নৌকার মালিক অন্য একজন !


মুক্তি


গুরু শিষ্যকে বললেন, ঈশ্বর দর্শণ যদি করতে চাস তবে গুহ্যদ্বার

দিয়ে ঢুকে যা আমার ভিতর –

গুরুর গুহ্যদ্বার দিয়ে ঢুকে পড়ল শিষ্য, মহাস্থানগুলি কালো

একটি মাত্র আলোর রেখা ধরে পৌঁছাল হৃদপিণ্ডের কাছাকাছি,

বেরিয়ে এল তাড়াতাড়ি- শ্বাসরোধ হয়েছিল তার-

গুরু জানতে চাইলেন, কি দেখলি?

শিষ্য বলল, দেখলাম তোমার হৃদপিণ্ডের শিকলে বাঁধা আছি আমি।

গুরু জানতে চাইলেন , আর?

শিষ্য বলল, মেয়েরা সব ন্যাংটো, তাদের দালালরা গান গাইছে ভালবাসার-

গুরু হো হো করে হেসে উঠলেন।

শিষ্য জানতে চাইল, আমাকে ওভাবে বেঁধেছেন কেন?

উচ্চৈস্বরে হেসে উঠে গুরু বললেন, অপরাধীই কেবল ঈশ্বরের কাছে

পৌঁছাতে পারে-তুই অপরাধ কর আমাকে মেরে-

শিষ্য বলল, মুক্তি পাব না, তোমার মৃত্যুর পর আমিও পড়ব ছিঁড়ে।


গুরু বললেন, তবে চল দুজনেই ঈশ্বরের গুহ্যদ্বার দিয়ে ঢুকে পড়ি

দেখি সেখানে যারা বাঁধা পড়ে আছে তারা কে কতটা অপরাধী-

বলে, গুরু শিষ্যের পায়ু দিয়ে ঢুকে গেলেন বললেন, রহস্য দুয়ার

খুলে যাবে আজ, সবটা সহ্য করতে পারিস যদি-

যোনি শিকল পায়ু এবং ধর্ম পার হয়ে শিহরিত শিষ্য বলল,

‘শুনতে পাচ্ছি শিশুর প্রথম ক্রন্দন, আনন্দ মুক্তি নয়, একমাত্র বন্ধন’।

 


শূন্য শবাধার


মৃত্যুর অন্ধকার এ রাত্রি অলং কার

এক উন্মাদিনীর পায়েরর শেকলে বাঁধা আছে জীবন আমার

নিরাময়ের একটাই চিকিৎসা – সারারাত উন্মাদিনী বিহার

প্রতি মূর্হুতেই আমরা পান করে নিচ্ছি অপরের সুরাসার,

‘জীবন তোকে পাল্টে দেব’- একথা আমরা বলতে পারি না আর,

আমার প্রতিটি কোষ চায় অত্যাচার – পদ্ম, করিস তুই সূর্যের প্রচার-


কিছু মানুষের পাখা আছে সারারাত তারা উড়ে বেড়ায়

সব দ্বন্ধকে অতিক্রম করেও দেখি সংশয়ে ভরা হৃদয়,

এ রোগের জন্ম শরীরের রসে অরাজক ভয়,

আমাকে টানতে টানতে উন্মাদিনী পায়ের শিকল হারায়

বলাৎকার আর শিৎকার এক সাথে মিশে গিয়ে

আমাদের পায়ে নতুন শিকল পরায়,

এ অন্ধকার হিংসার সূতিকাগার, আমরা দুঃখের অধিকার

আমাকে ন্যাংটো করে উন্মাদিনী কেড়ে নেয় সব বস্ত্রভার,

শরীর খাটানো পয়সা দিয়ে স্ত্রীলোক পোষে তারই শরীরের দখলদার,

প্রণয়িনীর বুকে চেপে বসে খুনির হাতে ভালবাসার সৎকার,

নিশাচর জানে নক্ষত্রের হাসিতে অর্দ্ধেক হয়ে যাবে রাত্রির আঁধার

জানিস মৃত্যু, উন্মাদিনী বুকে বসে আছে, তোর জন্য রেখেছি শূন্য

                               শবাধার !



বন্ধন


সাতটি গণিকার সাথে উলাহুলা করে হাতে চাঁদ পেয়েছ তুমি

সাতটি সাধু গুলজার করে রেখেছে সমস্ত অরণ্যভূমি-

হাসতে হাসতে জীবন থেকে বেরিয়ে এল সাত সাতটি খুনি,

নারী তোমায় বকুলতলায় অনেকবার ঝরে পড়েছি, আমি

পুরানো মদ পোষা বাঘ- নভতলে এক সঙ্গীত শুনি,

জানি অশ্রুতই থেকে যাবে প্রকৃত বেদনার সামধ্বনি

ভালবাসা চেয়েছি বলে আমাকে খাস তুই প্রনয়িনী

কোকিল কেকা ও কুমুদ- জীবনের তিন ব্যবস্থাকে সত্য বলে মানি

সুধা শরীরের ক্ষুধা তোকেই আমরা এখন ইতিহাস বলে জানি

আমার বিষের প্রভাবে নীল হয়ে শুয়ে আছে আমারই দেবযানী।


সারাংশ তোর কাছে জানতে চাই মানুষ বরফের উপর কেন জ্বালায় আগুন,

বীজের শরীরে আর এক বীজ, ভ্রুনের হৃদয় জুড়ে আর এক ভ্রূন

গুনীন হে কোথায় পেলে কংকালের গায়ে মাংস লাগাবার গুন!

গোলাপ রক্ত তুই প্রলাপ ; হায়েনার হাসিতে নেমে এসেছে  শকুন

তোর লিঙ্গ লাভ হবে না হিজড়ে, সমুদ্র চায় আরও নুন  -

আমাদের জীবন সাত খুনির সাথে সাত গণিকার চিরস্থায়ী বন্ধন।


ভয়


আজ সেই রাত নক্ষত্রপাড়ায় আমাদের জন মদ এনেছে মেয়েরা

বউলের গন্ধে আর এক ক্ষুধার চাবুক খেয়ে এখানে এসেছে ভিখারিরা

পেছনে শূন্যগর্ভ ইতিহাস- সামনে একথালা ভাতের অন্ধকার

ঈশ্বর বৃহন্নলা তুমি- তোমাকে খুন করার পর কিছু ধূমপান করার ইচ্ছা আছে আমার,

রাত্রির এই অকৃত্রিম পানীয় জীবনের কেন্দ্রে বসে জীবনবিরোধী গান গায়

“ এ মদ কিনেছি আমরা শরীর বেচা পয়সায় ; যদি ভালবাসা করতে হয়

জানবে এই নিটোল নিজস্ব নদীটি ভরা আজ কানায় কানায়-“

হে বনানীর দেবতা মানুষকে একা দেখে আততায়ী হয়ে ওঠে তোমারও হৃদয়!

বস্তুতপক্ষে আমার মজ্জা মাংস ছাড়া তোমারও নাই আর কোন আশ্রয়!


গোলাপ নামে বাজারের মেয়েটি নিজেকেই ভালবাসা বলে জানে-

একার বেদনায় প্রত্যেক কুঁড়ে ঘরে একটি নক্ষত্র এসে নামে

গোধূলির পাখি শরীর ভরে একটুকও নীরবতা আনে-

মায়াচাঁদ বিবর্তনের মাংসাশীকে একা করে বনে

কোন কোন হৃদয়ে ভালবাসা জাগে পাশবিক অনুষ্ঠানে !

ম ম করছে বউলের গন্ধ- সব নক্ষত্রই নগ্ন হয় ভিখারির সামনে।


মানুষের নিষ্ঠুরতায় কালো এ রাত্রিতে শুধু ফুলের অধিকার

এক ভিখারিনী জানে মালিকরা এসে শরীরটি দাবি করবে তার-

জীবন্ত জীবনের হাসি হাসছিস তুই রে জীবনবিরোধী অবতার !

মাংসে যদি একটু  নুন মাখিয়ে দি সেতাই হবে তোর সম্পূর্ণ আহার ।


সকলেই সশস্ত্র আমরা তাই আবহাওয়াতে এত সংশয়

উড়তে বড় কষ্ট হয় কিন্তু মাটিতে কেন এত ভয় !


মৃত্যুহীনা


মৃত্যুহীনাকে কাঁধে নিয়ে মরনশীল আমরা দাঁড়িয়ে আছি

এ মদ বড় আন্তরিকঃ বারবার পাত্রটিকে শুধু চুম্বন করেছি,

আমাকে বিমূর্ত দেখে বাগানের সব ফুল তুলে ভরাও সাজি

এই মদে মাতাল হয়ে স্বাধীনতার কথা ভুলে গেছে কয়েদী

আমার ভালবাসা পাবার পরই তুই হয়েছিস আমার বিবাদী,

যন্ত্রনার মূর্হূতে শরীরের পোকাগুলি বলে, ‘আমরা তোমাকেই ভালবাসি’

পরজীবীর সুখ গোপন করতে মুখের আড়ালে লুকিয়ে রাখিস হাসি-

পশুদেরই শুধু ধর্ম আছে আমরা ধর্মহীন বলে নিজের নগ্নতাকে ঢাকি !


মৃত্যুর ভাবে এই মদ মাতাল করে আমাকে- রাত্রির অরন্য এই হৃদয়

জালিয়াৎ শুধু হেসে গেলি কালপুরুষ থেকে সপ্তর্ষিমণ্ডলে যাবার সময়,

আতুর বলে জানি ভালবাসার সময় কোষে কোষে  ভয়ের জন্ম হয়

কানা হয়েও গুপ্তচর দুই হাতের সম্মোহনে আমাকেই খুঁজে পায়

দুঃখ জয় করতে এসে এক ষোড়শীর পেটে দুঃখকেই প্রোথিত করে যেতে চায়

রক্তের স্বাদ নোনতা নয়, মিষ্টি বলে পৃথিবী আরও রক্ত চায়,

যে দেশে নবান্ন, সেখানেই গাছ আর পাখির একসাথে বন্ধন মুক্তি হয় !


এ রাত্রির শেষ নেই, ছোটলোকের দল শুধু মদটুকু হাতে নিয়ে এখনও বসে আছি

তোকে যে নামিয়ে দেব সে উপায় নেই- তুই জীবনের এত কাছাকাছি-

নিজের খাবারটুকু তুলে নিয়ে অন্যের খাবার নষ্ট করা, মাছির দ্বৈতজ্ঞান আমরা পেয়েছি

বিষে বিষক্ষয়- এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে আরও বিশৃঙ্খলা হয়ে গেছি

ঘৃনাকে গ্রহনযোগ্য করার জন্য আমাদের মুখে বসে পুরীষের মাছি

চাঁদের আকাশে সূর্য ওঠায়, বরফ গলে, রক্তে ঢুকে পড়ে নদী

অনুচ্চারিত চিৎকার হিসাবেই থেকে যাব আমরা যত অপরাধী!


জীবনের মানচিত্র বুকে আঁকা আছে, শয়তান তাই তোর এত হাসি,

চৌম্বকক্ষেত্রটির অন্ধকার অনুসরন করে তুই উড়ে চলে যা পাখি,

মৃত্যুহীনাকে কাঁধে নিয়ে মরনশীল আমরা এখনও দাঁড়িয়ে আছি

অস্ত্রের স্বপ্ন দেখো বলে সহবাস কালে অস্ত্রের অনুভূতি পাও তুমি,

আমার এক অংশে এক অবধূত আছে অন্য অংশে আছে তার যোগিনী!


হরি সন্ন্যাসী


হরি সন্ন্যাসী শ্বাপদ হয়ে ঢুকল গিয়ে মেয়েমানুষের ঘরে

কতক্ষন ফুলের আয়ু নরম কনিষ্ঠা জানে, আমাদের তৈরি

ওষুধ শূন্যের শ্বাদন্তকে গ্রহনযোগ্য করে- জাদুকরের হাতে

হৃদয় কখনও পাথর কখনও কবুতর, বিচার করা গণিকারা

অবশেষে উঠে এল স্বপ্নের দরে, রক্ষিতা হৃদয় কুকুরের মত ঘোরে

কয়েকটা উপমানুষ শুধু শেষ অধ্যায় পর্যন্ত আকন্ঠ নেশা করে

ঘাঘরা পরা অভিনয়কালে একে একে ধর্ম যায় বারোটি গণিকার ঘরে –


শোন তবে রূপরেখাহীন মানুষ রহস্য-রজনীর ভোর হবে আজ

যে ছিল নাগর, দাঁড়ি গোঁফ কামিয়ে নিয়েছে বহূবল্লভার কাজ –

কৌশলে গুপ্তচর লড়াই বাধিয়ে দেয় খুনি আর ভিখারিতে

ভাগ্যবতী যৌনতা চাকার মত চলে, কালোয়ারের দেবযানী

ঘেন্না করেও অহিংসার পথ ধরে- দেখব মন্ত্র তোকে তোলে

কত উপরে ! হারানপ্রাপ্তি বসন্তে পাখি ডেকে ওঠে বর্তমান চিরে –


মাজাঘসার কাজ শেষ করে হরি সন্ন্যাসী মাকে ভিক্ষা দিতে যায়

জাহাজ-বাঁধার ঘাটে, উলধ্বনি উঠছে, হিজড়েদের বিবাহবন্ধন অনুষ্ঠান

হচ্ছে আমাদেরই ভগবানের সাথে-

ভালবাসা বারবার সমুৎপন্ন বিশ্বাসঘাতকের হাতে-


এখানকার বাজারে ঋতুফল আছে- উচ্চবর্ণ ভালবাসা ক্ষুধা আশ্রয়

করে বাঁচে, আত্মজ অন্ধকার জীবন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে তোকে

মারবার আগে সব বুড়ো মিলে ধর্ষন করে গেল যুবতী ডাইনিকে

আমাদের জ্ঞান মৃত্যুর আলোকে শুকনো গুয়ের মত পড়ে থাকে

বাড়ন্ত এই বিহারে রাত্রি নামে উপসনার কালে, উড়বার পাখাদুটি

খুলে পড়ে তৃতীয় যামে – হরি সন্ন্যাসী খুন হল প্রকাশ্য দিবালোকে।


অপ্রাসঙ্গিক


জীবনের উৎসব নয় মৃত্যুর ক্ষুধা নিয়ে জেগে আছি আমরা

মাটির বুকে খনিজের মত লুকিয়ে ছিলাম ; সূর্যহীন শান্তি

ভালবাসা নেবার মত প্রসারিত হতে পারে নি বামন, অথবা

দেবার মত তার কিছু নাই বলে ঈশ্বর বলোতো তুমি

হৃদয়ের গর্তে বসে খুনি কার পূজা করে- আসবাবে ভরা

শোবার ঘরে আমার স্ত্রীলোক চেঁচিয়ে ওঠে ঘুমের ঘোরে

গণিকারা বেছে নিয়েছে জীবন তাদের, আমাদের ভালবাসা ছেড়ে।


এখানকার সীমাহীন রাত্রি আমাকে ক্রুদ্ধ করে, নক্ষত্রগুলি

আমারই রক্ত মাংস চায়- কোথায় যে জীবনের চাঁদ সমুদ্রের বুকে

ভেসে থাকে, কখন যে তৃনশস্যলতা আমাকে প্রকৃতি বানায়

পায়ুপ্রদেশ থেকে এক ব্যাথা মাথা পর্যন্ত শিরশির করে আসে

নিজের মুখে হাত দিয়ে হঠাৎই তার আকার পাই না খুঁজে

আমারই সৃষ্ট চরিত্রেরা ঘোরে এখানে আমার ই খুনির বেশে

আমারই স্বপ্ন আর মেয়েমানুষেরা ভেজে আমারই শরীরের রসে

চিৎকার শিৎকার মনে হয় আমারই জীবনের উনচল্লিশ খাঁজে

আমাদের সামনে এক প্রভাত হয়েছিল পেছনেও এক প্রভাত আছে

যন্ত্রনার শব্দ শোনা মাত্র চুলের মুঠি ধরে হিঁচড়ে তুলি তাকে

‘খা, পংক্তি ভোজনের পর যা পড়ে আছে’- মরবি এবার তুই

আকাশের বিদ্যুৎ ব্যাহত হয়েছে এ অরণ্যের প্রতি গাছে গাছে

আমার শূন্যতা ভরা শব্দ গুলি অর্থ পায় শিশিরে আর ঘাসে

জীবনের উৎসব নয়- ভয় পরস্পরকে কাছে টেনে আনে

পাত্রটি যেমন ছিল তেমনি আছে কেবল নিজেরই শুন্যের টানে

অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে ; এ ছায়া নাটকে বাস্তব ছিলাম আমি

ধর্ষনকারীর ভালবাসা কিছু বেশি ছিল- জল আজও নিম্নগামী

উন্মুক্ত আমি তাই দুর্বল ; ভালবাসা দেবার সময় লিঙ্গ আর হৃদয়

একই সঙ্গে উত্তেজিত হয়েছিল বলে সহবাসকালেই তাদের গ্রহন করে,......খায়


ইন্দ্রিয় চলাচল


কিছু স্বপ্ন আমাকে অভিভূত করে কিছু স্বপ্ন আমাএক নষ্ট করে

আমারই বুকের উপর চেপে থাকে ন্যাংটো সরস্বতী, বাস্তবে

আমি যতটা নিতে পারি তাকে তার চেয়েও কিছু বেশি,

পাহাড় থেকে নামছে নদী, এইভার- দমবন্ধ চাপ আমি ভালবাসি

জানি যতই প্রসারিত হোক তোমাদের ঐ আকাশ, যত পথ

তোমরা আবিষ্কার করবে- যত আনন্দ খুনিকে দাও

গণিকার নেশা গুলিভরা বন্দুক- কল্পনাসিদ্ধ শরীরে মিশে যাবে-

পাখিটিকে যতবার গুলি- কর শূন্যে এবং স্বপ্নে সে ভাসে-


অরণ্য থেকে আকাশে ওঠার আগেই এক সমস্যা দেখা দেয়,

সমূল উৎপাটিত বোঝা নিজের বুকে তুলে নেয় লিপিসরস্বতী,

মৃত্যু স্তম্ভিত হয়- সাপের মত শব্দচেতনা নিয়ে আমি রাস্তা

পরিবর্তন করি- মুখ দিয়েই বুঝতে পারি ইন্দ্রিয় নয় তার যোনি

অজানা শহ র উর্দ্ধমুখী পথ- পাতালে প্রবাহিত নদী

ফুল আর স্বপ্নে শিহরিত ছিল আমাদের শরীর এখন বিপরীতমুখী

সহবাসে  অর্দ্ধমানুষ তা পূর্ণ স্ত্রীলোএর কাছে সবকিছু করছে দাবী

বুঝতে পারি আরও হাল্কা হতে হবে আমাকে, ত্যাগ করতে হবে রাগ

আর ভালবাসা- ক্ষুধা তো শুধু জীবনের নয় মৃত্যুরও ধর্ম-

অপূর্ণই থাকি যদি তবে সসাগরা হয়েও শূন্য থাকে তোমাদের

হৃদয় জরায়ু..... নতুন এই পৃথিবী বুকে তুলে নিয়েছে সরস্বতী

স্বপ্নের বোঝা.....ইন্দ্রিয় চলাচল—পার্বতী স্তনদুটি শূন্যের মুখে ভরা


মহাকাশ মহাশূন্য


নক্ষত্রহীন আকাশ....স্বপ্নলোকের ছায়া, তোমাদেরই আমি সম্বোধন করি..

এসো সরস্বতী, এবারের বসন্তে আমরা মাটি থেকে শূন্যে জেগে উঠি,

এখানেই আমাদের পরিচয়, দূরত্ব ও ব্যবধান...এখানেই আমাদের সহবাস,

এখানে যে সূর্য ওঠে তাকেই আমরা কাছে পাই- সকলের মাঝখানে থেকে

হঠাৎই বড় নিঃস্ব বোধ করি- যথেষ্ট দূরে আছি বলে মাধ্যাকর্ষণ ছিন্ন হয়,

যে নিয়মে একদিন আগুন ছিলাম সেই নিয়মেই আবার মাটি হয়ে যাই।


তবে নিঃস্বত সম্পর্কে আরও কিছু কথা আছে- মানুষেরই রক্তে ফুল ফোটে

এ শূন্যে এখনও কিছুটা জায়গা আছে- পাহাড় আর সমুদ্র ভালবাসার দুই চিহ

ছুরি আর বন্দুক ফেলে দিতে হল তাও ধর্ম আছে বলে নয়,দরিদ্র যে চায় অন্ন !


য আমি চেয়েছি তাই আমি পাই- তারপর এক অন্ধকার নামে- যে মাঠে

সন্ন্যাসী শুয়ে আছে- বুকে এক ফুল, উদ্দীপনাময় – গণিকারা চেনে তাকে

এ আকাশের রং ক্লে পালটে দেয়- কালো মেঘ আর তার পালিত পাখি ভিন্ন?

দুঃখে মানুষ কাঁদে কিন্তু দেবতারা তাকে প্রতিভাত করে খুনে আর ধর্ষনে-

আমার মাস্তুল সমুদ্রকে চায়, কল্পনায় ভেজে,প্রতিটি জোয়ারের টানে !


আগুনের ধর্মে যে জ্বলে সেই হয় মাটি আর জল- অস্থিমজ্জা

                      আর-এক নির্সগ আনে-


না-শোয়া শব্দতরঙ্গগুলি একে একে জড়ো হয়, বলে, ‘পার হও দেখি এ

দূরত্বসমুদ্র, ভালবাসায় স্বচ্ছ করো কালো এ আকাশ’- আদিবাসী শরীরের ঘ্রানে

শিউরে ওঠে প্রতি লোমকূপ- কি ভাবছো সরস্বতী, পা তোল আমার বুকে-

অনাবিষ্কৃত ধাতুর মত গোপন থেকে যাব আমরা- কুয়াশার মত ভেসে বেড়াই

যখন, অর্থ আর তাৎপর্য সব হারিয়ে মিশে যাই মানুষ আর পাখিদের গানে !


কালো এই রাত্রির বুকে আমরা কি যে খুঁজে পাই, বুক থেকে রক্ত ঝরেছিল বলে

আজ সে ফুলেদের চেনে... একা আছি এ উপত্যকায়...লিপি সরস্বতী হলে,

পাহাড় আর তার বুকে প্রপাতের মত ওতঃপ্রোত হই... ছিন্নভিন্ন করি সংসার

সুর্যকে পেয়েছে বলে গাছ সবুজ, বহন করে নিজের ওজন আর শুন্যতার ভার !


এ নির্সগে মৃত্যু আর কল্পনা নয়- স্বপ্নের শবের উপর সন্ন্যাসীর আরাধনা-

ফুল তাকে চিবিয়ে খাই, পাপড়ির অন্ধকারে আমি পুরোপুরি কানা,

সরস্বতী পা তোল- সম্মোহিত আকাশ আসছে নেমে....রক্তের জোয়ার

শুরু হলে ধূলিময় শূন্যে নক্ষত্রের খেলা....ছড়িয়ে দাও পাখা আকাশের নৌকা!

দৃষ্টিহীন যে সেই বেদনাহীন- আমি যে দেখেছি তোমার অভাবনীয় আকার

এ মহাশূন্যে প্রবেশ করার আগে উন্মুক্ত কর ঊরু, স্তন, যোনি আর পা।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন