একক সাঁতার 
অনিরুদ্ধ সাঁপুই

বিচিত্র ঘোমটা সরে যায়, দোদুল হাসি বয়ে যায় উপকূল থেকে প্রত্যুত্তর—আঘাত অর্থাৎ ফিরে আসা। তোমার অনিমিখ চোখে নৌকা নামে, ছলছল ঢেউ, মৃদু আঘাতে মেলে দাও পাঁজর,—গোলাপের সখ্যতা ও দূরত্বে ছায়া-বিদুষীর অভিমান থেকে গান হয়ে নামো সন্ধ্যে যেন পক্ষীর সমাবেশ, প্রাঞ্জল দারু-শরীরে গোধূলির লিপি। অভিনিবেশ মুখ তোমার মৃত্যুর গণিতে কেবল গুণফল, চূর্ণ বাঁশির স্মৃতি রক্ষাকারী রাতের মতো অঙ্গুলীহেলন— শৌচালয়ের গণআয়না বাড়িয়ে দিচ্ছে মুখোশ আর শৈশবের সাম্রাজ্যে হারানো চাদর, দুরন্ত পদছাপ নিয়ে ফলের পেকে ওঠা। প্রবল দৌরাত্ম্যে কোন্ রমণীর গর্ভকেশর ছিঁড়ে যায় সূর্যের বাগানে, আমার বুকের কাছাকাছি রাক্ষুসে সিঁড়ি বেয়ে নামে তপস্যার রাত, এক কৃষ্ণ-নিতম্বিনী। তুমি অপেক্ষমাণ, রসাতলে যেমন লবন-মৃতদের উচ্ছ্বাস বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে ও সাঁতারে জাদু-আয়নায় আলেকজান্ডারের ঘোড়া। নিষ্ক্রিয় আত্মা নিয়ে আমি ডুবে যাই নীল পদ্মের পাঁকে, অপূর্ব খরস্রোত হৃদয়ে—তোমার যামিনীর মীড় রসাল হয়, ধোঁয়া, প্রবঞ্চনামূলক গৃহ ওড়ে শুধু এবং প্রতীক্ষার উপশিরায় খচিত ঋতু—হে ঋতুমতী শূন্যতা।


আলো-ছায়া হাত নিয়ে চলেছি, কিছুটা রঙের দিকে— দেওয়ালের চোখ দেখ একান্নবর্তী বালি ঝরে, টিকটিকির বাসস্থান, শোচনীয় হাওয়া লিখতে লিখতে ঘুরিয়ে নিচ্ছ মধ্যমায় পাথরের আঙটি, জ্যোতিষ বলেছে চন্দ্রের দোষ এবং বংশের শেষ ব্যক্তিটি হিসেবে অগত্যা অনিবার্য ত্যাগ ঝিনুকের মাংস সরে গেছে পাত পড়েছে ডাল-চচ্চড়ি শাকভাজা শুটকি ভর্তা যেন পিতা তুমি আর গর্ভবতী আঁটকুড়ে জলজ পেটে ধরেছে নিটোল মুক্তা, সেই কবে গরম জলে পা পুড়েছে, কালো-বেড়ালের সংকেত, নিষিদ্ধ মৈথুনে পটের কালী সর্বনাশী জিভ, স্বাদকোরকের মায়া। পুনরায় গল্পের অভ্যুত্থান শিখা একবার দপ্ করে ক্ষণিক রহস্য ও মুখ ঘিরে বিবাহ বাসর, আড় চোখ উশখুশ গা ঢলানী, পাছা দুলুনি বৃহৎ চাঁদের ভগ্নাংশ নিয়ে আজ উৎসবের দিন গো তাই রাতদুপুরে শাঁস। পদকর্তার ঠোঁট নড়ে, ঝুমঝুম ঘিরে আসে বনবিলাস অন্তরালবর্তী ছন্দ আর পণ্য নিয়ে তীক্ষ্ণ মাংস কেবল অনুসন্ধিৎসা কেবল রতিযান কেবল গোপন ক্ষোভ আর বাদনদারের হৃদরোগ নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে দেশ, আমাদের কর্পূর সংসারে ভোজন-পর্ব তাই অবিরল রান্না তাই সুখ।


বুনোহাঁস হে গো অকৃতদার শিয়ালকাঁটার বনে রক্তক্ষরণ আর ফিরে পাবে না। সামিয়ানার সরজু বিকেল দৃষ্টি মদির চকিত ঠোঁট হারিয়ে ফেলেছ সেই টুংটাং সেই বক্ষস্ফীতির ঢেউ চিরে হেমন্তের বিউগল। আমার চরকাগোপন শীত রাতে যন্ত্রের স্মৃতি,  ভাঙা দরজার নিটোল কপোতী, ঝড়ের প্রবল আকুতি নিয়ে ডানা মেলেছ— কোথায় কোন দোলাচলে তপতীহৃদয় ভার্যা নিয়ে পথ চলা, একদিন— সৌখীন গন্ধ আলো ও নিরাপদ চাবুকের সন্ধানে অবশিষ্ট প্রজাপতির মতো,  চক্ষু-বর্ণের চাতালে মদ্যপানের বিরতি। একদিন। বুনোহাঁস হয়ে সলতে ও প্রদীপে উন্মেষ এবং উড্ডীন তোমার ছায়ার আধার, আমাদের শার্দূল মেঘের অট্টহাসি, ইতর ঝংকার খসে পড়ে নাভিমূলে। সাংসারিক তাঁবুর মানচিত্র ঘেঁষা উন্মুখ কথা, ব্যাহত ছুরির আস্ফালন ও অপরিহার্য উপহাস শুধু আমাদের— নীলিম আসবাব ঘিরে সময়ের গতি শুধু, হে বুনোহাঁস আমাদের বিচ্ছিন্ন সোপানে ডিম প্রসারণ করো, উদগত করো নভোনীল ও ভৈরবী।

2 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন